মেসির হাতে স্বপ্নের শিরোপা
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৪৪:১৪ অপরাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার : ট্রাইবেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে মেসির হাত ধরে ৩৬ বছরের খরা ঘুচালো আর্জেন্টিনা। স্পটকিকে ৪র্থ শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়া উগো লরিসের নাগালের বাইরে দিয়ে জড়ালো বল। গনজালো মনতিয়েল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। জার্সি টেনে মুখ ঢেকে কান্না লুকাতে চাইলেন। প্রায়শ্চিত্ত করলেন তার কারণে ফ্রান্সের সমতা ফেরানো গোলে। হ্যান্ডবল করেছিলেন তিনি। তাতে লিওনেল মেসির আজীবনের স্বপ্ন যে ভেঙেচুরে যেতে বসেছিল। ওই গোলেই পূরণ হলো তাদের অধিনায়কের আজীবন লালিত স্বপ্নের। উল্লাসে মাতলো গোটা লুসাইল স্টেডিয়াম। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন যে আর্জেন্টিনা! বিশ্ব সেরা মেসি। এমন শিহরণ জাগানো ম্যাচে ভাগ্যদেবী তার একমাত্র আক্ষেপ পূরণ করে দিলেন।
এর আগে ফ্রান্সের দ্বিতীয় শট আটকে দেন মার্টিনেজ। তৃতীয় শট গোল পোস্টের বাইরে চলে গেলে খেলার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আর্জেন্টিনার হাতে।
অগণিত শিরোপা আর রেকর্ড পায়ে লুটিয়ে পড়লেও বুকের মধ্যে ছিল দীর্ঘশ্বাস। অপূর্ণতার বেদনা। খুব কাছে গিয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণায় বুক বিদীর্ণ হয়েছিল ব্রাজিলে। তবে আশা হারাননি। স্বপ্ন দেখছিলেন, ছিলেন অপেক্ষায়। অবশেষে ফুটবল জাদুকরের জীবনে এলো পূর্ণতা। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একমাত্র খাদ থাকা বিশ্বকাপ ট্রফি নিলেন হাতে। লিওনেল মেসি হলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলার।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস করেন ডি মারিয়া। সেখান বল পেয়ে পাস দিলে না নিজের দখলে নেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস। ম্যাচের ৫ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। তবে তা আটকে দেন হুগো লরিস। এরপর ম্যাচের ৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ডি পল। তবে ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হলে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স। তবে বল নিজের দখলে নিয়ে ক্লিয়ার করে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ম্যাচের ১৭ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট করেন ডি মারিয়া। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। ম্যাচের ১৯ মিনিটে বাম দিকে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। সেখান থেকে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানের নেয়া ফ্রি কিক থেকে হেড করেন অলিভিয়ের জিরুদ। তবে তা অল্পের জন্য চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
ম্যাচের ২১ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর ডি মারিয়াকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি। তার গোলে ম্যাচে প্রথমবারের মতো লিড পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে আক্রমণে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ২৬ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। তবে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা।
ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ফের গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ডান দিক থেকে পাস দেন ম্যাক অ্যালিস্টার। সেখান দারুণ ফিনিশিংয়ে বল ফ্রান্সের জালে জড়ান ডি মারিয়া। তার গোলে ম্যাচে ২-০ গোলের লিড পায় আর্জেন্টিনা।
এরপর ম্যাচের ৪৩ মিনিটে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে আক্রমণে যায় ফ্রান্স। তবে তা ক্লিয়ার করে দেয় ডিফেন্ডাররা। এরপর বেশকিছু আক্রমণ করেও গোল করতে ব্যর্থ হয় দু’দল। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফিরেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে তা রুখে দেন হুগো লরিস। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে ডি পলকে ফাউল করার কারণে হলুদ কার্ড দেখেন আদ্রিয়েন র্যাবিওট। এরপর ম্যাচের ৫৭ মিনিটে আক্রমণে যায় ফ্রান্স। তবে তা আটকে যায় আর্জেন্টাইন ডিফেন্সে।
এরপর ম্যাচের ৭৮ মিনিটে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর ম্যাচের ৭৯ মিনিটে কোলো মোনিকে ফাইল করার কারণে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। স্পট কিক থেকে বিশ্বকাপে নিজের ৬ষ্ঠ গোলটি করেন এমবাপ্পে। তার গোলে ম্যাচে ব্যবধান কমায় ফ্রান্স। এরপর ম্যাচের ৮২ মিনিটে ফের গোলের দেখা পায় ফ্রান্স। কোম্যানের পাস থেকে বল আবারও জালে জড়ান এমবাপ্পে। এটি তার ৭ম গোল। তার জোড়া গোলে ম্যাচে সমতা আনে ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ফাইনাল ম্যাচ।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরুর পর আবারও লিওনেল মেসির গোল। ফের এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১০৮ মিনিটে গোল করে দলকে দ্বিতীয় দফায় এগিয়ে নেন মেসি।
এরপর মাত্র ১০ মিনিট ব্যবধানে ডি বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিকপূর্ণ করার মধ্য দিয়ে খেলায় ফের সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। এরই সাথে তার এ বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত ৮ম গোল করেন।