অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:১১:৫০ অপরাহ্ন
বেলাল আহমদ চৌধুরী
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে কবিতায় বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে গর্ব করে বলতে পারি- সাবাশ বাংলাদেশ এ পৃথিবী/ অবাক তাকিয়ে রয়,/ জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়- বাঙালির কর্মদক্ষতা, প্রতিভা, সাহস, বুদ্ধি ও আবেগ অসাধারণ। বাঙালির আরেকটি বড়গুণ বন্ধনহীন শৃঙ্খলমুক্ত থাকার তীব্র আকাক্সক্ষা। সুদীর্ঘ শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি ঘটে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। ল্যাটিন শব্দ ঠরপঃড়ৎরধ থেকে ঠরপঃড়ৎু শব্দের উৎপত্তি। ঠরপঃড়ৎু শব্দের বাংলা অর্থ বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। আজকের এই মহান দিবসে বাংলাদেশ দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে আবির্ভূত হচ্ছে সেটাই আমাদের বিজয়ের বড় আনন্দ। এ পর্যায়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর কতিপয় খাতগুলো উপস্থাপন করছি। গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে এক সমীক্ষার ফলাফল ২৫ নভেম্বর প্রকাশ করেছে। বিসিজির গ্লোবাল চেয়ার ইমেরাইটস হ্যান্স পল বার্কার বলেন, বাংলাদেশ অনন্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য রোল মডেল বেসরকারী খাতের অবদানের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। কোরপরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর ও দেশের বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান এই অগ্রযাত্রাকে বেগবান করে তুলেছে। যারপর ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামকে পিছনে ফেলে দেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তার উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছে প্রবাসী আয় যা দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা দিয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত দশ বছরে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে মোবাইল ফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৭০ লাখ। তাছাড়া গত এক দশকে ইন্টারনেট ব্যবহারীর সংখ্যা ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ উন্নত হওয়ায় প্রযুক্তি মাধ্যমে আর্থিক সেবার লেনদেন ৩৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগের বিকাশ ঘটেছে। উল্লেখ্য গ্রামীণ ফোন, রবি ও বাংলা লিঙ্ক বর্তমানে বিশ্বের নবম বৃহত্তম মোবাইল বাজার।
দেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রয়েছে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। তন্মধ্যে উল্লেখ্য ব্র্যাক ও ক্ষুদ্র ঋণের অগ্রগামী গ্রামীণ ব্যাংক প্রান্তিক মানুষের দোড়গোড়ায় এসে সুরক্ষা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্টাটআপ কোম্পানীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। স্টাটআপ প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা ই-কমার্স ও লজিস্টিকস মোবাইলে আর্থিক সেবা দাতা (এম এফ এস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ বাংলাদেশের প্রথম ইউনিকর্ণ, মূল্যমান (১০০ কোটি ডলার) যেখানে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সফট ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে বিকাশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এম এফ এস কোম্পানী। ইদানিং দেশে আরও কয়েকটি কোম্পানি ইউনিকর্ণ হওয়ার পথে যার মধ্যে শপআপ, চাল-ডাল ও পাঠাওয়ের মতো প্রতিষ্ঠান। সরকার ও স্টাটআপ বাংলাদেশ নামে ডেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল গঠনের মাধ্যমে খাতটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।
বিসিজির প্রতিবেদনে বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলোর কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে প্রাণ, আরএফএল কোম্পানি যারা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১৫০টি দেশে পণ্য রফতানি করছে।
আমাদের দেশের জনসংখ্যার আধিক্যের মধ্যে দেশের বিপুল জনসংখ্যার বেশির ভাগই তরুণ। তাছাড়া উর্বর মাটি, সস্তা শ্রম, তথ্য প্রযুক্তির উন্মুক্ত ব্যবহার, দক্ষ ও সফল জনগোষ্ঠীর কর্মে নিযুক্তির পর্যাপ্ত সুযোগ। তাছাড়া বহুমুখী আত্মকর্মসংস্থানে সংযুক্ত হয়ে দক্ষ তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে।
বিগত সময়ে বিশ্বজোড়া কোভিড-১৯ সাথে হাল আমলে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে করে সারা দুনিয়া আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির জন্য এক অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ রূপকথার চযড়বহরী ইরৎফ- এর মতো অর্থনৈতিক সফলতার উচ্চশিকড়ে উঠে বিশ্ব মানচিত্রে আবির্ভূত হয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, কোনো দেশের কাক্সিক্ষত রূপান্তর শুরু হয় একটি রূপকল্প বা ভিশন থেকে। এই ভিশন এমন এক মূল্যবোধের সজ্ঞাত যা একটি জাতিকে পৃথিবীর সর্বোত্তম জাতি হিসাবে পরিচিত করে তুলে।
লেখক : কলামিস্ট।