শূন্য আসনে উপনির্বাচন: আওয়ামী লীগের কাছে ভাগ চাইছে শরিকরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৫:৫১:২০ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনে ভাগ চাইছে আওয়ামী লীগের শরিক ও সমর্থক দলগুলো। উপনির্বাচনে বিএনপি না থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই এমপি হওয়া নিশ্চিত- এ ভাবনায় ক্ষমতাসীন দলেও প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) সুযোগ নিতে চায়। তবে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ ভোট দেখাতে জোট হবে না; দুই দলেরই প্রার্থী থাকবে। এ সমীকরণের মধ্যেও তিনটি আসনে ‘ছাড়’ চাইছে জাপা। আসন চায় আওয়ামী লীগের শরিক জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টিও। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বিএনপির এমপিরা। পরদিন সংরক্ষিত মহিলা আসনের একজনসহ ছয় এমপি পদত্যাগ করেন। গত ১৮ ডিসেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ভোট ১ ফেব্রুয়ারি। গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি হারুনুর রশীদ। তাঁর আসন শূন্য ঘোষণার পর তফসিল হবে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তাই উপনির্বাচনে যাঁরা এমপি নির্বাচিত হবেন, তাঁরা বড়জোর ১০ মাস পদে থাকবেন। কিন্তু পরের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে উপনির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থক দলগুলোর প্রার্থীরা ব্যাপক আগ্রহী। তবে নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
গত ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। একই বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকেও ডেকে নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। জাপা সূত্রের খবর, এ সময় জাপাকে এককভাবে উপনির্বাচন করতে বলেন সরকারপ্রধান।
জাপা সূত্রের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বলে আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়া যাবে না। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ দিতে ভোটের মাঠে নৌকার বিপক্ষে ‘লড়বে’ লাঙ্গল।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের খবর তো জানি না। জাতীয় পার্টি উপনির্বাচনে অংশ নেবে।’ জোটের সম্ভাবনা নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নিয়ে বিন্দুমাত্র আলোচনা হয়নি। তাদের নির্বাচন (আওয়ামী লীগ) তারা করবে; আমাদের নির্বাচন আমরা করব- কথা পরিস্কার।’
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় ফল হয়। অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি মাত্র ছয়টি আসন পায়। আওয়ামী লীগ পায় ২৫৮টি আসন। জাপা পায় ২২টি। বিএনপি শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয় পায়। ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বগুড়া-৬ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাপা, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বগুড়া-৪ আসনে জাসদের প্রার্থীকে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থীরা।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ২০১৪ এবং ‘১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। ২০১৪ সালে জিতলেও পরেরবার হারেন তিনি। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন চাওয়া হবে। আওয়ামী লীগ ছাড় দিলে ভালো, না দিলেও নির্বাচন করবেন তাঁরা।
বগুড়া-৪ আসনে ২০১৪ এবং ‘১৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন জাসদের রেজাউল করিম তানসেন। ২০১৪ সালে জিতলেও পরেরবার হারেন তিনি। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বগুড়া-৪ আসনে ২০১৮ সালের মতো জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে জানানো হয়েছে। আমু জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে শরিকরা আসন চাইলেও আওয়ামী লীগেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি।
জানা গেছে বগুড়ার দুটি আসনেই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী আছে। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, উপনির্বাচনে জোটের ব্যাপার নেই। আওয়ামী লীগ এককভাবে অংশ নেবে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দুর্গখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভাগ চায় জাপা। আওয়ামী লীগেও মনোনয়নপ্রত্যাশী ডজনখানেক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে একাদশ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল ও আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির হারুনুর রশীদ। এখানে ফের মনোনয়ন চান সাবেক এমপি ওদুদ। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে পরাজিত হলেও এলাকায় উন্নয়ন করেছেন।
মনোনয়ন দৌড়ে আছেন জেলার সহসভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানীও। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি জিয়াউর রহমান, সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসসহ অনেকে। জিয়াউর রহমান বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপির কাছে অল্প ব্যবধানে হেরেছি। এবার মনোনয়ন পেলে জয়ী হব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জটিলতা সবচেয়ে বেশি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে মহাজোটের মনোনয়নে এমপি হন জাপার জিয়াউল হক মৃধা। ২০১৮ সালে তাঁকে বাদ দিয়ে জাপা প্রার্থী করে তাঁরই জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হন জিয়াউল। দু’জনেই হারেন বিএনপির কাছে। জিয়াউল হক আবার প্রার্থী হতে চান। তাঁর ভাষ্য, রওশন এরশাদ তাঁকে মনোনয়ন দেবেন। তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। জিয়াউল দলের কেউ নন। মনোনয়ন পাবেন না। রেজাউল জানিয়েছেন, তিনি প্রার্থী হবেন। গত তিনটি নির্বাচনে ছাড় দিলেও এবার আসন ছাড়তে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃৃত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকউদ্দিন ঠাকুর বলেছেন, নৌকা প্রার্থী না দিলে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ২০০৮ সালে মহাজোটের মনোনয়নে এমপি হয়েছিলেন জাপার হাফিজ উদ্দিন আহমদ। পরেরবার নৌকা প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে তাঁকে হারান ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। গত নির্বাচনেও তিনি ছিলেন মহাজোট প্রার্থী। তাঁরা দু’জনই এবার প্রার্থী হতে চান।