আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
আমরা যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন চাই না, শান্তি চাই
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:০৭:২৪ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোভিডের পর এখন আবার এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন। এতে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত, হয়তো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। তারপরও আমরা অর্থনীতি ধরে রাখতে পেরেছি। কিন্তু এর আঘাতটা তো আমাদের ওপর আসবে।’
বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করুন। তাদের উসকানি দেওয়া বন্ধ করেন।
ভোট চুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। জনগণের আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করার যে চক্রান্ত করেছিল, তা দেশের মানুষ দেখেছে। মানুষ সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেয়। তারপর ইমার্জেন্সি সরকার আসে। আমাকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৮ সালে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।’
পরপর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসি। আজকে ২০২২। এত দিন টানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। বাজেট ১০ গুণ বাড়িয়েছি। কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করেছি। প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে তুলতে পেরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোভিড-১৯ অতিমারি সেই প্রবৃদ্ধি কিছুটা হলেও ব্যাহত করে।
আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি, ভোট নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। অনেকে কন্ট্রোভার্সিয়াল করতে চান। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করে দিয়েছি। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করে না। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। বাজেট থেকে তাদের সরাসরি টাকা দেওয়া হয়। আমরা ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি। ইভিএম কিছু কিছু চালু হয়েছে। সেখানে কোনো কারচুপি করার সুযোগ আছে বলে আমরা জানি না।’
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংসদে পাস করার প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকত তাহলে আমরা এটা কেন করব। খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম। তা তো আমরা করি নাই। আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।’
যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। স্যাংশন চাই না। শান্তি চাই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করুন। তাদের উসকানি দেওয়া বন্ধ করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিডের অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে কেবল আমরা বেরিয়ে এসেছি। এখনই এই যুদ্ধ আর স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন। সকল অগ্রযাত্রা নষ্ট করছে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে দুটি বাধা। একটি করোনা অন্যটি যুদ্ধ। এ জন্য বলছি আমরা যুদ্ধ চাই না। ওই যুদ্ধ চাই না। স্যাংশন চাই না। ওইগুলি বন্ধ করেন। সকল দেশ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে তার চলার অধিকার আছে। এই অধিকার সকল দেশের থাকতে হবে। যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে।’
এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘যুদ্ধের ভয়াবহতা কী আমরা জানি।’
যুদ্ধে মেয়ে ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। শিশুদের কী অবস্থা সেখানে এই শীতের মধ্যে বিদ্যুৎ পায় না। এ জন্য আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই। বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে আহ্বান জানাব, ওই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করুন। তাদের উসকানি দেওয়া বন্ধ করেন।’