সুষ্ঠু ভোটের কথা বলায় মুক্তিযোদ্ধাকে চড়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৫১:০৬ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : সুষ্ঠু ভোট দাবিতে লিফলেট বিতরণের সময় পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এতে দেখা যায়, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি ইনামুল হককে চড় মারেন। চড়দাতাকে চিহ্নিত করা না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের দাবি, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আগত মেহেরপুরের কোনো কর্মী এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে ম. ইনামুল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তাঁরা সর্বজন বিপ্লবী দলের ব্যানারে ২০২১ সাল থেকে প্রতি শনিবার শাহবাগে লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আগামী ২৭ ডিসেম্বর তাঁদের অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি রয়েছে। এই কর্মসূচির সমর্থনে গত শনিবার বিকেলে শাহবাগ এলাকায় লিফলেট বিতরণ করছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি তার ওপর চড়াও হয়।
তিনি বলেন, জনগণের দাবি নিয়ে কথা বলায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রমণকারী কে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁকে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তাঁর সঙ্গীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মেহেরপুর থেকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এসেছেন।
তিনি বলেন, এভাবে হামলা করে তাঁদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। ওই ঘটনার পর তাঁরা আরও আধা ঘণ্টা শাহবাগে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কর্মসূচির সময় ইনামুল হক কোথাও সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাটা হয়ে গেছে ভোটকেন্দ্র দখল। কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে- এটা আইন করে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
এ সময় ফিরোজা রঙের শার্ট এবং খয়েরি রঙের কোট পরিহিত এক ব্যক্তি ইনামুল হকের বাঁ গালে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বলতে থাকেন- ‘কীসের দেশ ধ্বংস হচ্ছে হা… দেশ ধ্বংস হচ্ছে…।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা বাংলাদেশের বর্তমান অসহিষুষ্ণ রাজনীতির চিত্র। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের বক্তব্য, বিবৃতি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে দূষিত করছেন। দেশের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা না ফিরলে কথিত উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না। এ জন্য সুষ্ঠু ভোট ও নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
জানা গেছে ম. ইনামুল হক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ায় তাঁর বাবা সে সময় হানাদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন ও জেল খাটেন। ইনামুল হক ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওয়াটার রিসোর্সেস সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮৫-৮৬ সালে।
তিনি হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইনামুল হক একজন লেখক, কবি, গবেষক ও সংগঠক। বর্তমানে কাজ করছেন জল পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও সর্বজন বিপ্লবী দলের আহ্বায়ক হিসেবে।