প্রাণের প্রকৃতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৪৬:০০ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ ছয়েফ উদ্দিন
জীবন আছে যার তাকে জীব বলে। যেমন- মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা ইত্যাদি। জীবের জীবনকাল থাকে। জন্মের পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীব বেঁচে থাকে। তারপর জীবনাবসান ঘটে। জীব দু’প্রকার। উদ্ভিদ ও প্রাণি। উদ্ভিদ চলাফেরা করতে পারে না। প্রাণি চলাচল করতে পারে। উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে। প্রাণি তা পারে না। উদ্ভিদ অক্সিজেন তৈরি করে। প্রাণি তা গ্রহণ করে। উদ্ভিদ কোষে প্লাস্টিড থাকে। প্রাণি কোষে থাকে না। উদ্ভিদ কোষের কোষ গহ্বর বড়। প্রাণি কোষের কোষ গহ্বর ছোট। উভয়ের মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকলেও মৌলিক বৈশিষ্ট্য একই। অর্থাৎ উভয়েরই প্রাণ আছে। আর এ উভয় প্রাণ কী একই জিনিস?
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ সর্বোৎকৃষ্ট প্রাণি। মানুষের প্রাণ বা রূহ বা আত্মা আছে। মানুষ ভালোমন্দ বুঝে। মানুষ পৃথিবীব্যাপী বিচরণ করে। মানুষ পৃথিবী নামক গ্রহ পেরিয়ে উপগ্রহ চন্দ্র-পৃষ্ঠেও পা রেখেছে। পৃথিবীর প্রতিবেশী মঙ্গল গ্রহ জয়ের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নিত্যনতুন কতো কিছু আবিষ্কার করে চলছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার প্রাণহীন দেহ অচল। কোনো কাজ করে না। জড় বস্তুর বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তাহলে প্রাণ বা রূহ বা আত্মা কী জিনিস? বিশেষ করে মানুষের প্রাণ কী দ্বারা তৈরি? সকল প্রাণির প্রাণ আছে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির প্রাণ কী একই উপাদান (বা অন্য কিছু) দিয়ে তৈরি? না কী কোনো পার্থক্য রয়েছে?
পিপিলীকা ক্ষুদ্র প্রাণি। তাদের নিজস্ব জীবন ধারা রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে ওরা সারিবদ্ধভাবে চলে। বিশেষ ক্ষেত্রটা কী ওরাই ভালো বুঝে। আমরা অনুমান করতে পারি। হয়তো খাদ্য অন্বেষণে ওরা একই পথে একই সাথে চলে। বন্যার পানিতে ওরা সঙ্গবদ্ধভাবে কুণ্ডলি তৈরি করে। কুণ্ডলিটি বানের জলে ঘুরপাক খেতে দেখা যায়। বাঁচার তাগিদে হয়তো ওরা এমনটা করে। ওদের নিজস্ব মেধা ও বুদ্ধি রয়েছে। ওদের প্রাণ আছে। ওদের প্রাণ আর মানুষের প্রাণ কী একই জিনিস? এমনিভাবে পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, মৎস্যকুল সহ অজস্র প্রাণি স্ব স্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে বসুধায় বিচরণ করছে। তাদের নিজস্ব মেধা ও বুদ্ধি রয়েছে। তাদের প্রাণ আছে। তাদের প্রাণ আর মানুষের প্রাণ কী একই জিনিস?
লাউ গাছ একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লাউয়ের বীজ মৃত্তিকায় রোপণ করলে ধীরে ধীরে বীজ থেকে অংকুর বের হয়। অংকুর চারা গাছে রূপান্তরিত হয়। চারাটি তিলে তিলে বড় হয়ে শাখা-প্রশাখায় রূপান্তরিত হয়। অতপর পত্র পল্লব ধারণ করে। তার পর ফুল ও ফল উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াটি অতি সূক্ষ্ম গতিতে সম্পন্ন হয়। মানুষ চক্ষুচর্ম ধারা অবলোকন করতে পারে না। এর নেপথ্যে কারো হাত রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা। লাউ গাছ জড় পদার্থ নয়। ইহা সজীব বস্তু। এর প্রাণ রয়েছে। এর প্রাণ আর মানুষের প্রাণ কী একই জিনিস? এভাবে অজস্র উদ্ভিদ নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এ ধরায় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর ওদের জীবনাবসান ঘটছে। ওদের প্রাণ আছে। তাদের প্রাণ আর মানুষের প্রাণ কী একই জিনিস?
প্রাণ বা রূহ বা আত্মা আসলে কী দিয়ে তৈরি? মানুষ জানে না। এর গঠন, প্রকৃতি, আকার, আয়তন, বর্ণ, গন্ধ, ওজন ইত্যাদি কিছুই মানুষ জানে না। যুগ যুগ ধরে মানুষ গবেষণা করে আসছে। রূহকে সঙ্গায়িত করতে পারেনি। আসলে রূহ বা আত্মা বা প্রাণ পৃথিবীর কোনো পদার্থ দ্বারা তৈরি নয়। তাই গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও মানুষ ইহার স্বরূপ উন্মোচন করতে পারে না। এর গঠন প্রকৃতি অজানাই রয়ে গেলো মানুষের কাছে। রূহ আল্লাহপাকের এক (বিশেষ) আদেশ। কোরআন আসমানী কিতাব। ইহা মহান সৃষ্টিকর্তার বাণী। এ কিতাবে সূরা বনী ইসরাঈল এর ৮৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এরা তোমার কাছে রূহ সম্পর্কে জানতে চায়, তুমি বলো, রূহ হচ্ছে আমার মালিকের আদেশ সম্পর্কিত একটি বিষয়, আল্লাহতালার পক্ষ থেকে তোমাদের যা কিছু জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তা নিতান্ত কম।’ রূহ সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু মানুষ জানে না।
অতএব, জানতে ইচ্ছে করে, সকল জীবের প্রাণ বা আত্মা বা রূহ কী একই (বিষয়) জিনিস? মানুষ ও অন্যান্য সকল জীবের রূহ কী আল্লাহপাকের একই আদেশ? না কী ভিন্ন কিছু?
লেখক : কলামিস্ট।