গোলাপগঞ্জে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘দেওয়ানের পুল’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:০৭:৪৫ অপরাহ্ন
মাহফুজ আহমদ চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ (সিলেট) থেকে : গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষèীপাশা ইউনিয়নে মোঘল স্থাপত্যের প্রত্ত্বতাত্ত্বিক নিদর্শন ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্ত করার জন্য অতীত ঐতিহ্যের স্মারক এই পুলটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত কয়েক শতাব্দী থেকে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়েছিল দেওয়ানের পুল। ইতিহাস বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, উপজেলার বারকোট গ্রামের শেষ সীমানায় প্রায় দুইশ’ বছর পূর্বে পুলটি নির্মিত হয়েছিল।
রেকর্ড অনুযায়ী, মুঘল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহ এর রাজত্বকালে অল্পকালের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন দেওয়ান গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং সারা বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই ধর্মপ্রাণ দেওয়ান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। দেওয়ানের নির্দেশে তৎকালীন সময়ে সিলেট থেকে ঢাকাদক্ষিণ পর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়। এ সড়ক পথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন, এর সামনে এক দীঘি খনন করান। হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকাদক্ষিণগামী সড়কটি আজো দেওয়ানের সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে দেওয়ানের পুলটি গোলাপগঞ্জবাসীর নিকট মুঘল স্থাপত্য রীতির একটি নিদর্শন ছিল। প্রাচীন দলিল ও রেকর্ডপত্রে তারই সাক্ষ্য বহন করে।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রবীণ শিক্ষাবিদ, ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান নজমুল ইসলাম সিলেটের ডাককে বলেন, ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটাকে না ভেঙ্গে যদি সংস্কার করা হতো; তাহলে তা মঙ্গলজনক হত। কেননা মোঘল স্থাপত্যের নিদর্শন এখন পাওয়া খুবই দুষ্কর। নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে ঐতিহাসিক নিদর্শনটি আজ বিলুপ্ত হয়ে গেলো।