পুলিশ ও জনগণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:৪৬:১৮ অপরাহ্ন
এমদাদুল আমিন চৌধুরী
পুলিশ হলো রাষ্ট্রের নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আভ্যন্তরীণ সকল প্রকার সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং বজায় রাখার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পুলিশ বলতে বুঝায় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য, যারা দুর্নীতি ও অপরাধ দমন ও প্রতিহত করা এবং শৃঙ্খলা রক্ষা, আইন প্রণয়ন, সম্পত্তি রক্ষা ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে সর্বদা নিয়োজিত। তাই প্রত্যাশা সংগত যে তারা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনকে মূূলনীতি হিসেবে অনুসরণ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ইয়ার্ন ওয়ারেন বলেছেন, The police must obey the law while enforcing the law অর্থাৎ ‘আইন প্রয়োগের সময় পুলিশ অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে’। আমরা ছোটবেলা পুলিশ শুনলে ভয় পেতাম। অনেক সময় আমরা (বাচ্চারা) দুষ্টুমি করলে বলতেন পুলিশ আসবে। তখন বাচ্চারা দুষ্টুমি বন্ধ করে দিত। বর্তমানে কালের এবং সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। পুলিশকে এখন জনগণের বন্ধু বলা হয়। পুুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল তা এখন আর নেই বললে চলে।
পুলিশ জনগণের বন্ধু, এই স্লোগানকে সামনে রেখে উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে পুলিশের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়পরায়ণতা, সততা, স্বচ্ছতা, তৈরিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বয়ে গড়ে তুলা হয়েছে কমিউনিটি পুলিশ। যাতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষ ও পুলিশের মধ্যে গড়ে ওঠে সামাজিক বন্ধন। আর এই বন্ধনের মাধ্যমে আমাদের পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতিকে অপরাধ, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি সুন্দর, সুস্থ সমাজ, দেশ ও জাতি গঠন করে বাংলাদেশকে বিশে^র দরবারে একটি বিরল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা যে, দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের গানের কলির বাস্তব রূপ দান করা ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/ সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’। আসলে বাংলাদেশ একটি নৈসর্গিক সুন্দর ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য ভূমি। একটি ছোট্ট ভূখন্ডে সম্প্রীতির ডোরে সকল ধর্মের মানুষের বসবাস সত্যিই মুগ্ধকর। বাঙালি জ্ঞান গরিমা, মেধায় বিরল। আমাদের সব ধরনের প্রতিকুলতা ও চেলেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন ‘পৃথিবী যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমরা বিদেশে গেলে আমাদের দেশের পুলিশের ও বিদেশের পুলিশের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাই’। উন্নত বিশে^র পুলিশের সঙ্গে এশিয়ার তথা বাংলাদেশের পুলিশের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে সততা, মানবিকতা ও নিষ্ঠার মধ্যে। বিদেশে কোনো লোক কোনো ধরনের অসুবিধায় বা বিপদে পড়লে স্বর্গীয় দূতের মতো ভূমিকা পালন করে পুলিশ। আমাদের দেশে তার বিপরীত চিত্র। তবে আমাদের দেশের উভয় চিত্র দেখতে পাওয়া যায় বা উভয় চিত্রের দৃষ্টান্ত বিরাজমান। আমাদের দেশে পুলিশ প্রশাসনে কিছু সৎ, আদর্শ, নিষ্ঠাবান ও উত্তম চরিত্রের পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের সততা, মানবিকতা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম মানুষের মনন জগতে স্থান করে নেয়। এদেরই একজন সিলেটের সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন (বর্তমানে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক হিসাবে কর্মরত)।
২৪ জুন, ২০১৯ সালে সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে তাঁর সততা, দক্ষতা, সাহসিকতা, ন্যায়পরায়নতা, ও আন্তরিকতা এই জেলার সর্ব স্তরের মানুষের মধ্যে উত্তম প্রভাব ফেলেছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য দ¦ার সর্র্বদাই সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। একজন সাধারণ মানুষ তাঁর কাছ কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি আন্তরিক ও নিষ্ঠার সঙ্গে তা আমলে নেন। তিনি দায়িত্বভার নেওয়ার পর বলেছেন ‘সিলেট হয় দুর্নীতি ও ঘুষ থাকবে না হয় আমি থাকবো, বেঁচে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন আছে ঠিকই, তবে হারাম বা অবৈধ এক টাকাও প্রয়োজন নাই। আমার শেষ নিশ^াস পর্যন্ত যেন এক টাকাও হারাম খেতে না হয় আল্লাহর কাছে এমনটাই চাই’। এছাড়া তিনি আরও বলেছেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রধান কাজ জনগণের সেবা করা। সিলেট জেলার সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) চরম হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, থানায় এসে সেবা প্রার্থীরা যেন কোনো ধরনের হয়রানীর শিকার না হয়। কয়েকটি থানা ওসিকে তিনি দায়িত্বভার গ্রহনের পরপরই বদলী করেছেন। পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দীনের কাজের সঙ্গে রবার্ট পিলের উদ্ধৃতি বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়। রবার্ট পিল বলেছেন, ঞযব ঢ়ড়ষরপব ধৎব ঃযব ঢ়ঁনষরপ ধহফ ঢ়ঁনষরপ ধৎব ঃযব ঢ়ড়ষরপব, অর্থাৎ পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ।
পক্ষান্তরে, বিপথগামী ও নীতিভ্রষ্ট পুলিশের কতেক কর্মকর্তা ও সদস্যের গর্হিত কর্মকান্ড বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন ও ম্লান করে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ^াসকে ধ্বংস করে দেয়। যাই হোক বাংলাদেশ সরকার পুলিশকে আধুনিকায়ন, জনগণ বান্ধব, নিষ্ঠাবান ও আস্থাশীল করে তুলতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা আরো ত্বরান্বিত হোক।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।