সিলেট কর অঞ্চলের ৩৫ জন সেরা করদাতাকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ট্যাক্সের টাকায় দেশের উন্নয়ন হয় মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয় বিদেশে বসেও প্রবাসীরা এনআইডি পাবেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৩৩:১৫ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন, এক সময় দেশের ৯৫ শতাংশ উন্নয়ন কাজ হতো বিদেশি সাহায্য থেকে। এখন ৯৫ শতাংশ কাজ হয় দেশের টাকা দিয়ে। এখন আমরা পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে নিজের পায়ে হাঁটছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কের একটি অভিজাত হোটেলে সিলেট কর অঞ্চলের ৩৫ জন সেরা করদাতাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়, লজ্জার। এমনকি এশিয়ার অনেক দেশও কর প্রদানে আমাদের দেশ থেকে অনেকটা এগিয়ে। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। কর দেয়ার প্রবণতা বাড়াতে দাতাদের মধ্যে উদ্দীপনা বাড়াতে হবে, তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার ট্যাক্স নেয় দেশের মঙ্গলের জন্য। ট্যাক্সের টাকায় দেশের উন্নয়ন হয়, দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়। এই ট্যাক্সের জন্য বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে। ট্যাক্সের জন্য মেট্রোরেল, সেতুসহ দেশের অগ্রগতি হচ্ছে। যারা ট্যাক্স দেন তারা আয়কর বিভাগের বন্ধু। অন্যদিকে ট্যাক্স ফাঁকি দেবার প্রবণতাও আমাদের দেশে রয়েছে। অথচ উন্নত দেশগুলোতে অন্যের কাছ থেকে বড় কিছু উপহার পাওয়া থেকেও তারা ট্যাক্স দিতে ইচ্ছে পোষণ করে।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, যারা আয়কর দেয়, শুধু তাদের উপর ট্যাক্সের চাপ বাড়ানো হয়। আইন করা উচিত যারা বাড়ির মালিক তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনার জন্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে আরও বলেন, কর না দিলে আমরা কোনো কিছুই প্রত্যাশা করতে পারি না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই; সেখানে আহরিত রাজস্বের অধিকাংশই আসে আয়কর তথা প্রত্যক্ষ কর থেকে। এমনকি এশিয়ার অনেক দেশও কর দেয়ার দিক দিয়ে আমাদের দেশ থেকে অনেকটা এগিয়ে। তিনি বলেন, বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে আয়কর বিভাগকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। মন্ত্রী মুষ্টিমেয় করদাতার উপর করের বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা সম্প্রসারণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সিলেট কর অঞ্চলের কর কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ পিপিএম, বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ ইয়ার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার (জলিল)।
প্রবাসীদের নানা সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব প্রবাসী বিদেশে বসেও এনআইডি পাবেন। এজন্য তাদেরকে দেশে আসতে হবে না। তিনি বলেন, প্রবাসীরা বিভিন্ন সময় নানা সমস্যায় পড়েন। অনেক সময় তাদের সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায়, দখল করে নেন কেউ কেউ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিষয়গুলো আমাদের ব্যথিত করে। তাই তাদেরকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য কাজ করার একটা প্রচেষ্টা আমার চলছে। যাতে তারা যে কোনো সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া সম্ভব হয়। মন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা সবসময় আমাদের দেশের পাশে রয়েছেন। তারা রেমিটেন্সের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দেশের কল্যাণে বিনিয়োগও করছেন। সেই প্রবাসীদের সম্মানে প্রতিবছর ৩০ ডিসেম্বর ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ হিসেবে আমরা পালন করার উদ্যোগ নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ষোলকোটি মানুষের বাংলাদেশ। তার মধ্যে মাত্র আশি লাখ মানুষ করের আওতায় রয়েছেন। বিশাল এই ফারাক থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমরা অনেক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থেকে যাবো।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার (জলিল) তার বক্তব্যে বলেন, সিলেটের প্রবাসীরা সবসময় দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসেন। তারা দেশের উন্নয়নের ভাগিদার। কিন্তু সেই প্রবাসীরা এনআইডিসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। সেই সমস্যাগুলো তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাধানের অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে সেরা করদাতার হিসেবে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সিলেট বিভাগের সেরা করদাতা এ কে এম আতাউল করিম বলেন, দেশ এগিয়ে গেলে আমরাও এগিয়ে যাই। আমরা চাই দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়ুক। নতুন করদাতা তৈরি হোক। এজন্য উপজেলা পর্যায়েও কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কর অঞ্চল সিলেটের যুগ্ম কর কমিশনার মর্তুজা শরীফুল ইসলাম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মিণী সেলিনা মোমেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনুসহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার জেলা থেকে মোট ১০ জন দীর্ঘমেয়াদী সর্বোচ্চ করদাতাকে সম্মাননা জানানো হয়। এছাড়াও ১৫ জন সর্বোচ্চ, ৫ জন নারী এবং ৫ জন তরুণ করদাতা রয়েছেন।
তার মধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী দুজন হলেন-আব্দুল খালিক এবং ধ্রুব জ্যোতি শ্যাম। এছাড়া সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ করদাতা হলেন- এ কে এম আতাউল করিম, রাখাল দে এবং এম নুরুল হক সোহেল। সর্বোচ্চ করদাতা নারী হলেন-হাছিনা আক্তার চৌধুরী এবং তরুণ পুরুষ সর্বোচ্চ করদাতা মুহাম্মদ শাহ আলম।
হবিগঞ্জ জেলার দীর্ঘসময় ধরে করদাতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন- মো. আব্দুল মালিক এবং মো. আজমান আলী। সর্বোচ্চ করদাতার মধ্যে রয়েছেন-মিজানুর রহমান শামীম, মো. গোলাম ফারুক এবং আলহাজ্ব মো. দুলাল মিয়া। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী নারীর মধ্যে রয়েছেন-শাবানা বেগম এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হয়েছেন-মো. এমদাদুল হাসান।
সুনামগঞ্জ জেলা থেকে দীর্ঘসময় ধরে করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন- ডা. মো. গোলাম মোস্তফা এবং হিমাংশু আচার্য্য। সর্বোচ্চ করদাতার পুরস্কার অর্জন করেছেন মো. আতিকুর রহমান, অমল কান্তি চৌধুরী এবং মো. মোর্শেদ আলম বেলাল। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী নারী করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন-দিলশাদ বেগম চৌধুরী এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হয়েছেন- মো. জহিরুল হক।
মৌলভীবাজার জেলা থেকে দীর্ঘসময় ধরে করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন-ডা. সত্য রঞ্জন দাস এবং সাধন চন্দ্র ঘোষ। এছাড়া সর্বোচ্চ তিনজন করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন- মো. মুহিবুর রহমান, কুতুব উদ্দিন আহমেদ এবং জালাল আহমেদ। সর্বোচ্চ করপ্রদানকারী নারী করদাতা হয়েছেন-সানা আরা চৌধুরী এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা- মো. তানভীর চৌধুরী।
এছাড়া সিলেট জেলা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন- মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আহমেদ এবং আলী আহমেদ কুনু। এছাড়া, তিনজন সর্বোচ্চ করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন-মো. আবুল কালাম, মোহাম্মদ আবু তাহের এবং মোহাম্মদ ফরহাদ। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী নারী করদাতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন মোসাম্মৎ আফসানা আক্তার এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন- মো. খাইরুল হাসান।
এবার সিলেট কর অঞ্চলের আটশ’ কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য থাকলেও আদায় করেছে ৮৩৫ কোটি টাকা।