অর্ধশত বর্ষে গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসব কাল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:৩৬:৫৫ অপরাহ্ন
সৈয়দ হারুন অর রশীদ, ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে : ছাতকের প্রথম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের ঊষা লগ্নে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যাপীঠ উচ্চ শিক্ষা প্রসারে চার যুগেরও বেশী সময় ধরে গৌরবের পথচলা অব্যাহত রেখেছে। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৫০ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করেছে এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিকে, ৫০ বছর পূর্তিকে স্মৃতির আয়নায় ধরে রাখতে আগামীকাল শনিবার কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় বিচরণ করা অগনিত শিক্ষার্থী বর্তমানে রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রবাসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পদচারনায় সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উৎসবমুখর হয়ে উঠবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রস্তুত করা ম্যাগাজিন গাংচিল এ কলেজ অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের লেখা কলেজের ইতিহাস প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রবেশ দ্বার গোবিন্দগঞ্জে প্রধান সড়কের পাশে এ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। তৎকালীন সময়ে ছাতক থানা তথা (ছাতক,দোয়ারা ও কোম্পানীগন্জ) ছাতক অঞ্চলে কোন কলেজ না থাকায়, এ অঞ্চলের বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি গোবিন্দগঞ্জে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের বে-সামরিক উপদেষ্টা, ছাতকের ভাতগাঁও গ্রামের কৃতিসন্তান এমএনএ আব্দুল হককে নিয়ে উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু তাদের লালিত স্বপ্ন তছনছ করে স্বাধীনতার পরপর ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭২ সনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন এমএনএ এডভোকেট আব্দুল হক। এ মহান নেতার স্মৃতি ধরে রাখতেই ১৯৭২ সালের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ছাতক অঞ্চলের প্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ। একই সালের ২৫ মার্চ কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু মোহাম্মদ পরিদর্শনে এসে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলে ১৯৭৩ সালের ৫ জুন গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ বোর্ডে অনুমোদন লাভ করে। প্রথমে গোবিন্দগঞ্জ নতুন বাজারে একটি টিন সেডের ঘরে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ রেল ক্রসিং এলাকায় কলেজটিকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন সিলেট এমসি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল আজিজ। ১৯৭২ সালের ১ আগষ্ট একাদশ মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের উদ্বোধন করে ছিলেন তৎকালীন সিলেটের জেলা প্রশাসক আব্দুল মালিক। ১৯৭৭ সালে ২৫ মে সিরাজুল ইসলাম অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৭৫-৭৬ শিক্ষাবর্ষে এ কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ চালু করার অনুমতি লাভ করে। ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক কোর্স চালু এবং ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে বৃৃৃৃৃহত্তর ছাতকসহ আশ পাশের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল কলেজের প্রথম ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক তৎকালীন বিমান ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী জেনারেল এমএজি ওসমানী। ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন দিঘলী গ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হেমেন্দ্র দাশ পুরকায়স্থ।
কলেজ প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিক থেকে বর্তমান পর্যন্ত যাদের অর্থ, ভূমি, শ্রম-ঘাম ও মেধা দিয়ে অবদানের রেখেছেন তাদের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার বনগাঁও গ্রামের রজব মিয়া, আব্দুল মছব্বির, একেএম মাহবুবুল হক, প্রিন্সিপাল সিরাজুল ইসলাম, জাউয়ার হাজী মোবারক আলী, জালালপুরের হাজী সিদ্দিক আলী, শিক্ষানুরাগী মুছন আলী, মঈনপুরের ফেরদৌস আহমদ, ইলামেরগাঁও গ্রামের আব্দুস শহীদ বিএ, লুৎফুর রহমান সরকুম, ওহাব আলী, এমাজ উদ্দিন, মৌলভী গোলাম মোস্তফা, নজির হোসেন, মাষ্টার আলাউদ্দিন, আপ্তাবুর রহমান, এমাদ উদ্দিন, আবুল হোসেন, আলহাজ্ব আব্দুল লতিব, খরিদিচরের ফখর উদ্দিন, কায়েস্থকোনার আব্দুল মন্নান, লামাবাজারের রাশিদ আলী, গড়গাঁও গ্রামের বশির আহমদ, সিংচাপইড় গ্রামের আব্দুল রহমান, প্রবাসী হাজী মৌলভী আরমান আলী, হাজী আবু তাহের, গোলাম কিবরিয়া, সমুজ মিয়া, ওয়ালী মাহমুদ, ক্বারী ইদ্রিছ আলী, ছৈয়দুর রহমান, আলহাজ্ব ক্বারী আব্দুল মান্নান, শুকুর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, রজব উদ্দিন, আব্দুল খালেক, সাবেক চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন, গিয়াস মিয়া, আমির আলী, আয়বর আলী, অধ্যাপক আব্দুর রব, আবুল হোসেন, আলতাফুর রহমান, আব্দুস ছালাম, সৈয়দুর রহমান, এ কে শামছুল ইসলাম (আবুল খয়ের), আবু লেইছ, মখলিছুর রহমান, কিরন চন্দ্র চক্রবর্ত্তী, শেখ সুলতান আহমদ, অধ্যাপক আব্দুল আজিজ মন্ডল, শামছুর রহমান, আব্দুর রউফ, আব্দুর রকিব চৌধুরী, আজহর আলী বিএ, নাজির হোসেন, হাজী ছোয়াব আলী, এড. হাজী আবুল কালাম, শামছুদ্দিন কাঁচা মিয়া চেয়ারম্যান, ছাতক প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদ, মনিরুজ্জামান, রফিকুল আলম, ফজলুর রহমান, এডভোকেট আবুল হাসান, মাষ্টার আব্দুল লতিফ, আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন, তৈয়ব আলী, আশিকুর রহমান আশিক, হাজী আছলম আলী, সমীরণ কান্তি দে, মকসুদ আহমদ মনির, খালেদ হাসান, অধ্যাপক ভাস্কর রঞ্জন দাস, অধ্যাপক সঞ্জিব কুমার শর্ম্মা, অধ্যাপক আব্দুন নূর তাহের, অধ্যাপক সৈয়দ মহাদ্দিস আহমদের নাম উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কলেজের উন্নয়নে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য সামছু মিয়া চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আব্দুল হাই, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ, সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের অবদান অনস্বীকার্য। কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি ও মুহিবুর রহমান মানিক এমপি এবং কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে। কলেজে নির্মাণাধিন দ্বিতল ভবন ও কলেজকে আধুনিকায়ন করনে মুহিবুর রহমান মানিক এমপির অবদান অনস্বীকার্য।
সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব আয়োজকসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপনের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২২ সালের শেষ দিন আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর শনিবার উৎসবে নবীন-প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে কলেজ ক্যাম্পাস। দিনটিকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এখন মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ।