ছোট্ট শিরোনাম, বৃহৎ সংবাদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
সংবাদপত্রের পাঠক প্রতিদিন সকালে উন্মুখ হয়ে থাকেন পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে না ঘটছে জানার জন্য। প্রথমেই নজর দেন নিজ দেশের দিকে। বড় বড় খবর দেখার আগ্রহ থাকে বেশি। একবার পড়ে নিলে পত্রিকা বাসি হয়ে যায়, তখন ফেলে দেওয়া হয়। এই পত্রিকার ‘সংক্ষিপ্ত’ শিরোনাম কলামে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা রিপোর্টিং পাওয়া যায়।
খাবারের সামর্থ নেই
৩০০ কোটি মানুষের
এ বছর বিশ্বখাদ্য দিবসে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের সুষম খাবারের ব্যবস্থা করার সামর্থ নেই। গরিবদেশ সমূহ এমনকি ধনী দেশগুলোর জন্যও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এই খবর। মহাসচিব গুতেরেস বলেন, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এক কঠিন সময়ে এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত তিন বছরে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মধ্যে দিনযাপন করছে, যেখানে অনাহার এবং মৃত্যু প্রতিদিনকার বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।’
কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ু সংকট, পরিবেশ বিপর্যয়, সংঘাত এবং ক্রমবর্ধমান অসমতার কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য, সার ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস আরও বলেন, ‘এ বছর আমাদের এই বিশ্বে সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। কিন্তু আগামী বছরের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনে কৃষকের জরুরি ভিত্তিতে সুলভমূল্যে সার দরকার? তাই এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য; কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবে না। অধিক উৎপাদন, অধিক পুষ্টি, আরও ভালো পরিবেশ এবং আরও ভালো জীবন’।
অলৌকিক জিয়ৎ পুকুর
জিয়ৎ পুকুর ঘিরে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনী। জিয়ৎ পুকুর একটা সাদামাটা পুকুর। এই পুকুরের দক্ষিণ পাশে ওলিয়ে কামেল হজরত শাহ সুফি আবু জাফর মদনী (রহ.)’র মাজার রয়েছে। এই ওলির কারণে এই পুকুরের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব জীবন্ত হয়ে আছে।
রংপুর নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ধর্মদাশ এলাকায় এই মাজার অবস্থিত। স্থানীয়দের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ও বিশ্বাস, এক সময় ওই পুকুরে কাটা মাছ ফেলে দিলে ওই কাটা মাছ জীবন ফেরত পেতো। এ কারণেই পুকুরের নাম হয়েছে জিয়ৎ পুকুর। পুকুরে সব ঋতুতে সব সময় পানি থাকে। কোনো সময় পানি শুকায় না।
এখানে মাজারের পশ্চিমে বড় সুদৃশ্য একটি মসজিদ আছে। আর মসজিদের ভিতরে রয়েছে একটি কুয়া, যাকে স্থানীয়ভাবে ইন্দারা বলা হয়। কুয়াটি বেশি বড় নয়, মাঝারি আকৃতির। কুয়াতে এক হাত পরিমাণ পানি আছে। এই পানি কমে না বা শুকায় না। লোকজন বিভিন্ন মানতের জন্য, বিমার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য পানি নিয়ে থাকেন। কুয়ার এমনই মাজেজা বা বৈশিষ্ট্য যে, এখান থেকে ৫০০ মণ খাবার রান্নার পানি উত্তোলন করলেও কুয়ার পানি শেষ হয় না।
ওলিয়ে কামেল হজরত শাহ সুফি আবু জাফর মদনী (রহ.) সাহাবিদের আমলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে এখানে এসেছিলেন। এখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন এবং এখানেই তাকে দাফন করা হয়।
জীবন্ত সাপ ব্যাঙ বিচ্ছু খাদক
জীবিত মানুষ বা কোনো জিন্দা মানুষ জীবন্ত সাপ ব্যাঙ বিচ্ছু খেতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেখানে সাপ-শরীরের কোনো জায়গায় কামড় দিলেই মানুষ মারা যায়, সেখানে জীবন্ত সাপকে মুখে পুরা যাবে কিভাবে?
তারপরও দেখা যায় এই ঘৃণ্য ও বিপদসংকুল কাজটি করছেন একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। তিনি ভাইরাল হওয়ার নেশায় এমন কাণ্ড করছেন। তিনি আকরাম প্রমাণিক। তিনি পাবনা জেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আকরাম প্রামাণিক বাংলাদেশের এক অজপাড়াগা’র মানুষ হয়েও বিশ্বময় পরিচিতি চান। এ আশায় নিয়মিত এসব সাপ, কাঁচা মাছ, কাঁকড়া, ইঁদুর, ব্যাঙ, কেঁচো প্রভৃতি জাদুকরের মতো তিনি এগুলো খেয়ে দেখান তার প্রতিবেশিদের। এক সময় আকরাম প্রামাণিক কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন।
আকরাম তার পোকা-মাকড় খাওয়ার ইতিহাস বলতে গিয়ে জানান ২০০২ সালে বাংলাদেশ টিভিতে এক ব্যক্তির পোকা মাকড় খাওয়া দেখে তিনি প্রথমবারের মতো কাঁচা কাঠের পোকা’র স্বাদ গ্রহণ করেন। এরপর একে একে কাঁচা মাছ, মাংস, কেঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি খেতে শুরু করেন।
গাধাচালক থেকে হলেন সুলতান
ইওজ খলজি প্রথম জীবনে মালবাহী গাধার চালক ছিলেন। তিনি দূরবর্তী স্থানে মালিকের মাল পৌঁছিয়ে দিতেন। এটিই ছিল তার পেশা। ইওজ খলজি ১২১২ থেকে ১২২৭ সাল পর্যন্ত বাংলার মুসলিম রাজ্য লখনৌতির সুলতান ছিলেন।
ইওজ খলজি উত্তর আফগানিস্তানের গরমশির এর এক নগণ্য বাসিন্দা। এক সফরে তিনি কয়েকজন দরবেশকে খাদ্য ও পানি দিয়ে তুষ্ট করেন। পরে তাঁরা ইওজ খলজিকে আশীর্বাদ করেন এবং ভারতবর্ষে যেতে নির্দেশ দেন। ভারতবর্ষে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে বখতিয়ার খলজির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ১১৯৫ সালে তাঁরা দু’জন ভারতে পৌঁছেন। বখতিয়ার খলজির সহকারী হিসেবে তিনি উদন্তপুর বিহার জয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিহারে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদান বখতিয়ার খলজির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লখনৌতি (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মালদা) বিজয়ের পর ইওজের বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বখতিয়ার তাঁকে দেবকোটের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কাঙ্গোরির জায়গির প্রদান করেন। বখতিয়ারের মৃত্যুর পর তাঁর অধস্তন প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে সুলতান কুতুব উদ্দীন আইবেকের নির্দেশে অযোধ্যার গভর্ণর কায়েমাজ রুমী বাংলা আক্রমণ করেন। রাজনীতিতে জ্ঞানসম্পন্ন ইওজ সম্রাটের বাহিনীকে স্বাগত জানান। রুমী সফলতার সঙ্গে বাংলা অধিকার করে ইওজকে দিল্লির অধীন সামন্ত নিযুক্ত করে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন।
অতঃপর আলী মর্দান খলজি ১২১০ সালে দিল্লির সালতানাতের অধীন বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পালনের পূর্ব পর্যন্ত ইওজ এ পদে আসীন ছিলেন। তাঁর আগমনের পর ইওজ এদেশের শাসনভার তাঁর নিকট ন্যস্ত করে স্বীয় কর্মস্থলে প্রত্যাবর্তন করেন। অল্প দিনের মধ্যেই আলী মর্দানের কঠোর নীতির ফলে রাজ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়। তখন এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইওজ অসন্তুষ্ট খলজি অমাত্যদের সংগঠিত করে আলী মর্দানকে হত্যা করেন এবং ১২১২ সালে সুলতান গিয়াস উদ্দীন ইওজ খলজি উপাধি ধারণ করে বাংলার সিংহাসনে আরোহন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইওজ খলজি লখনৌতিতে তাঁর ক্ষমতা সুদৃঢ় করেন। আলী মর্দান কর্তৃক নির্বাসিত প্রভাবশালী খলজি অমাত্যদের ইওজ খলজি ডেকে পাঠান, তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন এবং তুর্কি সৈন্যদের নিজের পক্ষে নিতে সক্ষম হন। তাঁর গৃহীত প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল দেবকোট হতে লখনৌতিতে (গৌড়) রাজধানী পুনঃস্থানান্তরিত করে এখানে সম্পূর্ণ নতুন একটি নগরের পতন ঘটানো। সে সময় নগরটির পশ্চিম পাশ দিয়ে নদী প্রবাহিত ছিল। ইওজ রাজধানীর অপর তিন দিকে মাটির কেল্লা নির্মাণ পূর্বক প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেন। একই উদ্দেশ্যে রাজধানীর সন্নিকটে বসনকোটে একটি শক্ত দূর্গ নির্মাণ করেন।
লেখক: কলামিস্ট