শ্রীমঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডে ৪০ টি দোকান ভস্মীভূত ॥ ক্ষতি দেড় কোটি টাকা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ৬:৫৬:২৫ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের পোস্ট অফিস রোডে ‘নিক্সন মার্কেট’-এ অগ্নিকাণ্ডে ৪০টি কাপড়ের দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প ও পাশের একটি প্রাইভেট ক্লিনিক। সবমিলিয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার ভোরে সংঘটিত আগুনে একটি নতুন মিনি ট্রাকও পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গতকাল শনিবার সকালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট পরিদর্শন করেছেন উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব ডঃ আব্দুস শহীদ এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, পৌর মেয়র মো. মহসিন মিয়া, থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সর্দার।
ব্যবসায়ী ও এলাকার নৈশ প্রহরী সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার ভোর চারটার দিকে মার্কেটের পোস্ট অফিস রোডের পেট্রোল পাম্প অংশে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মার্কেটের পাশের পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা একটি নতুন মিনি ট্রাকে আগুন ধরে যায়। আগুনের উত্তাপে আশেপাশের বহুতল ভবনের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। ক্লিনিকে অবস্থানরত রোগী ও রোগীর স্বজনরা আতঙ্কে দিক বিদিক ছুটতে থাকেন।
খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট এসে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে পেট্রোল পাম্পকে প্রথমে রক্ষা করে। পরে জেলা সদর মৌলভীবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিসের আরও একটি ইউনিট এসে যোগ দেয়। তিনটি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনে তাদের দেড় কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি দোকানে কম করে হলেও ৫ লাখ টাকার কাপড় ছিলো। মনিরুল ইসলাম নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী জানান, তার দোকানে ১৫ লাখ টাকার উপরে ভালো ভালো কম্বল ও শীতের কাপড় ছিল। তিনি সব হারিয়েছেন। তবে এই আগুন নাশকতা না অন্য কিছু তা তিনি বলতে পারেননি।
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, আগুনের খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে এসেছি। আগুন নিভাতে এবং ক্লিনিকে অবস্থানরতদের সরাতে সবাই মিলে কাজ করেছি। তার দাবি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে পুড়ে যাওয়া দোকানের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ঘটনার সময় অজ্ঞাত দু’জন লোককে আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে দেখা গেছে। পরে আরও কয়েকজন অজ্ঞাত লোককে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এটি রহস্যজনক উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
একাধিক সূত্রমতে, ওই মার্কেটের জমির স্বত্ব নিয়ে পার্শ্ববর্তী পেট্রোল পাম্পের মালিকের সঙ্গে পৌরসভার বিরোধ রয়েছে। মালিকানার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে জমিটি পৌর কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ মো. আবু তাহের বলেন, ‘আগুন লাগার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে বলা যাবে না। আমরা তদন্ত করে পরে জানাতে পারবো। দোকানগুলোতে প্রচুর শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য কাপড় থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পরে।’
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া বলেন, আশা করছি আগুন লাগার প্রকৃত কারণ সংশ্লিষ্টরা খুঁজে বের করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পৌরসভার পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করা হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় বলেন, আগুনে ৩৭টি দোকানের সবকিছু পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে সহায়তার আশ্বাস দেন।