স্বাগত ২০২৩
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৫০:৪২ অপরাহ্ন
আফতাব চৌধুরী
সাল ২০২২ বিদায় নিয়ে ২০২৩ এসে হাজির। হিসাব-নিকাশের খেরো খাতার শূন্য পাতা পুরো একটি বছরের অম্ল-মধুর-তিক্ত নানা স্বাদের অভিজ্ঞতা আর নানা জাতের হিসাব-নিকাশে ভরে ওঠার অপেক্ষায়। নতুন বছর, নতুন সূর্য, নতুন সকাল। সব নতুনের সমাবেশে কারই বা পুরোনো থাকতে ইচ্ছা করে। তাই বদভ্যাসের দাসত্ব ছিঁড়ে, সু-অভ্যাসের সঙ্গে সন্ধি করে, নতুন বছরে নতুন আমি’ হয়ে উঠতে চাই। বছরের শুরুতে ফেসবুক ‘নিউ ইয়ার রেজলিউশন’-এ সরগরম হয়। নতুন বছরে নতুন নতুন প্রতিজ্ঞার দীর্ঘ তালিকা। নতুন বছরের শুরুতে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উদ্যম টগবগিয়ে ফুটতে থাকে। একটা সজীব সূচনার জন্য অনেকেই তাই বছরের প্রথম দিনটাকে বেছে নেন। নীরোগ সুস্থ শরীর, মজবুত মানসিক গঠন, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, সফল কর্মজীবন, সুখী দাম্পত্য কিংবা উষ্ণ প্রেমের সম্পর্ক- জীবনকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করতে এই তো আমাদের চাওয়া। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই চাওয়াগুলোকে পাওয়ায় পরিণত করা মানুষের সামর্থ্যের বাইরে নয়, নয় অসাধ্য সাধন। দৃষ্টিভঙ্গি আর জীবনাচারে কিছু পরিবর্তন আমাদের উপহার দিতে পারে সেই কাঙ্খিত জীবন। নিজেকে ঢেলে সাজানোর ইচ্ছায় শুরু হোক নতুন বছর- ইচ্ছাপূরণ যখন আমাদের হাতেই। নীরোগ শরীর। নতুন বছরে জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে চাই জীবনীশক্তি বাড়াতে কিছু পরামর্শ হল। সকাল-সকাল ঘুম থেকে ওঠা, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া ব্যায়াম ও ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তোলা। সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস, আর সারাদিনে অন্তত আরও ৬ গ্লাস পানি পান। ভারী প্রাতরাশ, হালকা নৈশভোজ। প্রতিদিন খাবারের পাতে শাকসবজি-ফলমূল রাখা। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বংশগত রোগগুলোকেও রাখা যাবে নিয়ন্ত্রণে। মেদহীন শরীর পেতে চাইলে ঝরিয়ে নিতে হবে বাড়তি ওজন। পুষ্টিবিদদের সাফ কথা, ‘দিনে কতবার কোন ধরনের খাবার কতটুকু খাচ্ছেন, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সকালের খাবার দেরিতে খেলে রাতের খাবার দেরিতে খাওয়া হয়। তাতে ওজন বাড়ে। রাতে আমরা কম সক্রিয় থাকি বলে কম ক্যালোরিযুক্ত সহজলভ্য পাওয়া উচিত। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভাত, রুটি, চিনি ও তৈলাক্ত খাবার কম রাখতে হবে কোমল পানীয়ের পরিবর্তে লেবুর রস, ডাবের পানি খাওয়া যায়। কোন বেলায় তেল-চর্বিযুক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া হয়ে গেলে পরের বেলা ভাত-সবজি খেয়ে ক্যলরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। খিদে পেলে চানাচুর-বিস্কুট বা সিংগাড়ার মতো খাবার না খেয়ে শসা, টকদই, ফলমুল খেলে পেট ভরে, ওজনও বাড়ে না।
আমরা অনেকেই জীবনের ছোট খাটো টানাপোড়েনেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। মনোবল বাড়ানোর উপায় কী? মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাকেও জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিলে ব্যর্থতার গ্লানি আমাদের গ্রাস করতে পারে না। প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় বের করা উচিত। আত্মসচেতনতা চিন্ত শক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে এবং সমস্যা সমাধানে এই একাকী সময় দারুণ কার্যকর। শিশুরা নতুন প্রাণের স্ফুরণ। এদের সঙ্গে মিশলে মন সজীব হয়। এসবের বাইরে প্রথাগত চিন্তার ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প চিন্তার ক্ষেত্রে প্রবেশ করলে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়, মন উদার হয়। মোট কথা, দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি পরিবর্তনই মানসিকতাকে অনেকটাই সূদঢ় করতে পারে।
বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের প্রভাব পড়ছে পরিবারগুলোয়। আলগা হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। মুখোমুখি আলাপের চেয়ে মানুষ এখন ভার্চুয়াল জগতের যোগাযোগের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আত্মকেন্দ্রিক এই সময়ে মা বাবার সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব বেড়েছে যে-কোনো প্রজন্মের থেকে বেশি। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা দূর করতে দিনের কোনো একটা সময় একসঙ্গে কাটানো উচিত, যেমন রাতের খাবার একসঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলেও শীতলতার বরফ গলে, দুরত্ব ঘোচে। ছোটোবেলায় সন্তানকে সময় না দিলে বড় হয়ে, তারা বাবা-মাকে এড়িয়ে চলতে পারে। তাই দিনের অন্তত কিছুটা সময় তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। শিশুদের পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। মা-বাবারা সবসময় অভিভাবকসুলভ আচরণ না করে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে সন্তানেরা মনের কথা অসঙ্কোচে বলতে পারে। পারিবারিক বন্ধন কারো একক প্রচেষ্টায় টিকে থাকে না, চাই পরিবারের সব সদস্যেও অংশগ্রহণ। তবে বাবা-মার ভূমিকাই এক্ষেত্রে মুখ্য।
পেশাজীবীদের মধ্যে যাঁরা বিদায়ী বছরে আশানুরূপ সাফল্য পাননি, তারা নতুন বছরে কর্মক্ষেত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুত হবেন সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ হল। কর্মক্ষেত্রে ভালো করার পূর্বশর্ত নিজের পেশাকে ভালোবাসা। কাজের প্রতি আন্তরিক না হয়ে দায়সারাভাবে কাজ করলে সাফল্য ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকবে। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সবসময় নিজেকে শানিয়ে রাখতে হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল পেশাজগতে নিজেকে সময়োপযোগী করে তুলতে হবে।
নিজেদের অজান্তেই অনেক সময় দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্ক একঘেয়ে হয়ে যায়। কখনো ভুল-বোঝাবুঝি আর একরোখা মনোভাব শ্বাসরোধ করে ফেলে সম্পর্কের। মনোবিদদের মতে, দম্পতি বা প্রেমিকযুগলের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া খুব জরুরি। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা চেপে না রেখে দু’জনে আলোচনায় বসলে ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে না। কোনো অভিযোগ থাকলে আক্রমনাত্মক সমালোচনা না-করে নমনীয়ভাবে বুঝিয়ে বলাটা ভালো। একঘেয়েমি থেকে সম্পর্ককে বাঁচাতে রোজকার এক ধরনের কাজের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দু’জনে ঘুরতে যেতে পাবেন, নতুন কিছু শিখতে শুরু করতে পারেন একসঙ্গে সম্পর্ক তাজা থাকবে।
একসঙ্গে অনেক লক্ষ্য নিয়ে এগুলে অনেক সময় মনোযোগের কেন্দ্র হারিয়ে যায়। তাই শুরুতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বেছে নিতে পারেন যে-কোনো একটি লক্ষ্য। সেখানে পৌঁছে গেলে মনোযোগ দিতে পারেন আরেকটি লক্ষ্যে। নিজের ভিতর যে পরিবর্তনটা আমরা জানতে চাই, সেটাকে হতে হবে সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট ও বাস্তব সম্মত। বড় লক্ষ্যকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। কোনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পরিবর্তনের অগ্রগতি নিয়ে আলাপ করলে উৎসাহ বাড়ে। লক্ষ্য অর্জনের পথে ছোটোখাটো সাফল্য উদযাপনে অনুপ্রেরণা বেড়ে যায়। তাই বাগাড়ম্বর নয় ২০২৩ সাল হোক লক্ষ্য পূরণের বছর।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।