শীত-ঠাণ্ডার অপকার থেকে বেঁচে থাকা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৫২:০৫ অপরাহ্ন

রফিকুর রহমান লজু
আসছে আসছে করে অবশেষে ঠাণ্ডা নেমেছে। রাতে শীত অনুভূত হয়। পাতলা কাঁথা দিয়ে রাতে গা ঢাকতে হয়। নভেম্বর শেষ হতে চললো তবুও জাঁকালো ঠাণ্ডা পড়েনি। ঋতু পরিবর্তনের পালাক্রমে শীত এসেছে। শীতে শরীরের প্রতি আলাদা পরিচর্যা দরকার। তা না হলে ঠাণ্ডাজনিত নানা অসুবিধা, রোগ, বিমার দেখা দিতে পারে। শীতের তীব্রতা স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে। জীবনযাত্রা অন্যরকম হয়ে যায়।
ঠাণ্ডার এই সময়ে শরীরের স্বাস্থ্যের যত্ন ও পরিচর্যাই প্রধান কাজ। এ সময়ে সর্বত্রই ঠাণ্ডা-সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, টনসিল ব্যথাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ঠাণ্ডায় বেশি কষ্ট হয় বৃদ্ধ ও শিশুদের। একটু বেখেয়াল বা অবহেলা হলেই তাদের ঠাণ্ডা লাগে। শীতে ত্বক বা চামড়া শুকিয়ে টান টান হয়ে যায়, চামড়ায় ভাঁজ পরে যায়। তাই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। প্রচুর পানি খেতে হবে, চোখে-মুখে পানির ঝাঁপটা মারতে হবে। পানি খেতে হবে। প্রতিদিন দুপুরের আগে গোসল সেরে নিতে হবে। গোসলের আগে সারা শরীরে সরিষার তেল মাখতে হবে, একটু নারিকেল তেল মিশালে ভালো হয়। গায়ে তেল দিয়ে কিছু সময় রোদে থাকলে আরও ভালো। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।
শিশুদের রোদে রেখে লোশন, অলিভওয়েল মাখাতে হবে। গরম পানিতে নিম পাতা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে পরে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে ছোটরা-বড়রা গোসল করলে চর্মরোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমরা নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করি না, যখনই প্রয়োজন হয়- সকালে, দুপুরে, বিকেলে, রাতে গোসল করি। এই অনিয়ম স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রতিদিন একই সময়ে বিশেষ করে সকালের দিকে গোসল সেরে নেওয়া ভালো। পানিতে ডেটল বা সেভলন মিশালেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
শীতকালে ঠোঁটফাটা একটা রোগ। কারো কারো ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়। ঠোঁটে গ্লিসারিন বা কোনো জেল ব্যবহার করলে উপশম পাওয়া যায়। ভোরে শিশিরের পানি দিয়ে ঠোঁট ভিজালে ফল পাওয়া যায়। সব সময় ঠোঁট ভিজা রাখতে হবে। ঠোঁটে চামড়া ওঠলে ছিলতে নেই বা টানতে নেই। তা করলে রক্ত বের হবে, ব্যথা হবে। নরম ঠোঁটের ব্যথা মারাত্মক কষ্টের। শীতে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য গরম কাপড় পরতে হয়। গরম কাপড় একনাগাড়ে ব্যবহার করি। সাধারণত গরম কাপড় ধুই না কারণ ধইলে সহজে এবং শীঘ্রই শুকায় না। অথচ অপরিষ্কার ভাইরাস সহজেই বাসা বাঁধে। দুই একদিন পরপর গরম কাপড় রোদে শুকানো দরকার। গরমের সময় পানির পিপাসা হয়, তখন আমরা প্রচুর পানি পান করি। শীতকালে পিপাসা হয় না। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করি না। পানি শরীরে মিনারেলের কাজ করে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীর ডি-হাইড্রেট হয়, এমনটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, সব ঋতুতে শীতকালে, গ্রীষ্মকালে।
ত্বক ভালো রাখতে মাছ-মাংস-ডিম যেমন প্রয়োজন, তেমনি পর্যাপ্ত সবুজ শাকসবজি, টাটকা ফল, আনারস, কমলালেবু, আপেল, পাকা পেঁপে খাওয়া দরকার। যাদের এলার্জি হয় তারা বোয়াল মাছ, চিংড়ি মাছ, পুটি মাছ, হাঁসের ডিম, গো-মাংস পরিহার করে চলা দরকার। আমরা চেষ্টা করবো ডাক্তার-ওষুধ, হাসপাতাল পরিহার করে চলার এবং পারতপক্ষে যেন হপাসাতাল ক্লিনিকে যেতে না হয়।
লেখক : সাবেক শিক্ষক ও কলামিস্ট।