জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:৫৭:০৩ অপরাহ্ন

জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই নীতিবাক্যটিকে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা এবং পুলিশের সততা ও কর্মউদ্দীপনা বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বছর পালিত হয় এই সপ্তাহ। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। অথচ বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এই পুলিশ বাহিনী আমাদেন স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ করেছে। এই গৌরবগাঁথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
যেকোন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সে দেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ। তারা যদি দক্ষ, দায়িত্বনিষ্ঠ ও সৎ হয়, তাহলে মানুষ নিশ্চিন্ত থাকে। সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোন বাধা থাকে না। এর বিপরীতটি হলে মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার সীমা-পরিসীমা থাকে না। সত্যি বলতে কি, মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে এক ধরণের ভীতিও রয়েছে। নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের কিছু কিছু সদস্য। পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে আইন ভঙ্গ করা, নিরীহ বিচারপ্রার্থীদের সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাদের হয়রানি করা,তদন্তের নামে নিরপরাধ মানুষদের আটক করে নির্যাতন করা, মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দেয়া ইত্যাদি। কোন কোন সময সন্ত্রাসি-অপরাধীরাও পুলিশের প্রশ্রয়ে তাদের অপকর্ম চালিযে যেতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে পুলিশের যতোগুলো ভালো কাজ রয়েছে তার সবই চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের নানা ‘অপকর্মের’ নিচে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, পুলিশের এইসব অপকর্মের বিচার হয়না, সাজা হয়না। অভিযোগের তদন্তের ভার আরেকজন পুলিশকে দেয়ায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তই হয়না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সময়ই পুলিশের নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়। এব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে- সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে ভূমিকা রেখেছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ কথা ঠিক যে, নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের পুলিশ বাহিনী ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। হাতে গোনা দু-একটি ঘটনা বাদ দিলে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়, জীবন রক্ষায় কাজ করছে। পাশাপাশি এটাও ঠিক, পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন তো করছেই না, উল্টো নিজেরা জড়িত হয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। পুলিশের এই ক্ষুদ্র অংশটির কারণে এ সংস্থার ভাবমূর্তি কখনও কখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হয়ে থাকে। পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তাদের মধ্যে সততা ও কর্মের প্রতি নিষ্ঠা তৈরি করতে হবে। দূর করতে হবে আস্থার সংকট। বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। উন্নত বিশ্বের আদলে পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তুলতে সময়োপযোগি ব্যবস্থা নেওয়া হবে; জাতীয় পুলিশ দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।