প্রিয় এদেশ আমার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:২৫:১৩ অপরাহ্ন
![প্রিয় এদেশ আমার প্রিয় এদেশ আমার](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2022/08/dak-po-sompadokio2-4.jpg)
রঞ্জিত কুমার দে
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা নদীমাতৃক এ বাংলাদেশ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে তার নিজ গণ্ডি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারই প্রেক্ষাপটে একুশ শতকের বাংলাদেশের প্রত্যাশা। সুদীর্ঘ দুশ বছর ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছে বাঙালি। ব্রিটিশ শাসনের অবসানে পাকিস্তানিরা চেপে বসে বাঙালিদের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো। আঘাত আসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। কিন্তু বাঙালি ঐতিহ্য তথা সংগ্রামপ্রিয়তা থেমে থাকেনি। ভাষার জন্য উৎসর্গিত হলো বুকের তাজা রক্ত। সেই রক্তমাখা পিচ্ছিল পথেই আসে একাত্তরের মহান মুক্তি সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিরিশ লাখ মানুষের জীবন, দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত আর কোটি কোটি টাকার ধন সম্পদের বিনিময়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হলো বাঙালি জাতির বহু আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। এই গর্ব নিয়েই স্বাগত জানাই নতুন শতককে, নতুন সহস্রাব্দকে আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ, প্রিয় দেশ গড়ার মানসে জীবন উৎসর্গ করা বাঙালি ভাই-বোনদেরকে। উপযুক্ত সহস্র সমস্যার মাঝেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের চেতনাধারী বাংলাদেশ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সবসময়। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে বহুগুণে। বাঙালির অহংকার ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান একটি অনন্য সাধারণ ঘটনা।
বিশ্বময় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারা আমাদের এক গৌরবের ব্যাপার। ক্রীড়াঙ্গনে বিগত শতকে বাংলাদেশ আরেকটি মাইলস্টোন স্থাপন করেছে। সারাবিশ্ব চমৎকৃত হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সোনার ছেলেদের হুঙ্কারে। আই.সি.সি চ্যাম্পিয়ন হওয়া, বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও ভারতকে পরাজিত করতে পারা- সবই এক একটি ইতিহাস। এ সোনালি ইতিহাসের মণিকোঠায় পা রেখেই একবিংশ শতকে বাংলাদেশের পদচারণা আরও তাৎপর্যময় হবে, আরও সুগভীর নিবিড়তায় বাঙালি জাতি সদর্পে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াবে- এটিই সকলের কাম্য।
আমার প্রিয় দেশ আত্মপ্রত্যয় ও আত্মপ্রচেষ্টার দ্বারা আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করবে এটিই হবে স্বনির্ভরতার মূলমন্ত্র। জনসমস্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে। পরোমুখাপেক্ষিতা কমাতে হবে, তবেই দেশ স্বনির্ভর হবে। বিগত শতাব্দীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার লাভ বাঙালি জাতির শিরকে সমুন্নত করেছে। সে সাথে গত শতকে শরৎচন্দ্র, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, জসীম উদ্দিনের মতো কালজয়ী লেখক, জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান প্রমুখ প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। সংগীতের ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন খাঁ, গোলাম আলী খাঁ, রবি শংকর, বেলায়েত খাঁ প্রমুখ বিশ্বসভায় নিজ নামে পরিচিত। রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশবন্ধু, চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বোস, মাওলানা ভাসানী, এ.কে. ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ মহিমায় সমুজ্জল। এদের স্মৃতিচারণ করে ও আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দীতে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলতে পারবে স্বপ্নের স্বনির্ভর দেশ এ প্রত্যাশা সকলের।
নতুন শতকের কাছে প্রত্যাশা আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায় ও অর্থনৈতিক বৈষম্য মুক্ত। প্রত্যাশা করি নতুন শতকে এদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত দেশ। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হবে। রাজনীতির অসহিষ্ণুতা বিদূরিত হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকবেন তারা হবেন আকাশের মতোই উদার। লোভ-লালসা, হানাহানি কিছুই স্পর্শ করতে পারবে না তাদের। তবেই বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়ে বিশ্ব সভায় নিজ আসন মজবুত করতে পারবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।