টাকা মারতেই প্রকল্প
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:২৮:২০ অপরাহ্ন
দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারলে বাড়বে উন্নয়নের গতি। বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ। তাদের মতে, দুর্নীতি প্রতিরোধে আইএমএফের পরামর্শ কার্যকর করতে পারলে উন্নয়নের গতি আরও তিন শতাংশ বাড়বে। আর সাধারণ মানুষের কল্যাণের আকাংখা ভালোভাবে মেটানো যাবে। তাদের মতে, যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে বেড়ে যাবে আয় বৈষম্য। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে হতদরিদ্র নিরসনের লক্ষে পৌঁছানো কঠিন হবে।
দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। কারণ দুর্নীতি-লুটপাটের কোন সীমা পরিসীমা নেই এখানে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাট-দুর্নীতির ফিরিস্তি বিশাল। বলা যায়, লাগামহীন। “টাকা মারার জন্যই প্রকল্প’- অবস্থাটা এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা তাদের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে বহুবার। বলতে গেলে, প্রকল্প আর দুর্নীতি এক হয়ে গেছে এখন। যেখানে প্রকল্প সেখানেই দুর্নীতি। আছে ঘুষ বাণিজ্য। সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে ঘুষ নেয়ার প্রবনতা ও ঘুষের হার বাড়ছে। বাড়ছে সরকারি সম্পদ লুটপাট ও আত্মসাতের মাত্রাও। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০২১ সালের ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে’ বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে। সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম ছিলো। বর্তমানে রয়েছে ১৩তম অবস্থানে। অপরদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, তালিকার অবস্থানে পরিবর্তন হলেও আসলে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। অন্য দেশের ভালো-খারাপ করার কারণে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতাই দুর্নীতির বড় কৌশল। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায় পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্প শেষ হতে লেগে যাচ্ছে নয় বছর। এতে বাজেট বাড়ছে তিন গুন। দুর্নীতির কারণেই মূলত প্রকল্প সময়মতো শেষ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা গুরুত্বপর্ণূ। বিশেষ করে বাস্তবায়নে যারা জড়িত, তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে-ব্যর্থতার দায় কার।
লুটপাট-দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত জনগোষ্ঠী বছরের পর বছর ধরে, বলা যায় বংশ পরম্পরায় এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে সরকারও তাদেরকে লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে কোন অপকর্ম যাতে না ঘটে, তা তদারকির জন্য সরকারেরই একটি সংস্থা রয়েছে। ‘বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’ (আইএমইডি)। অথচ এই সংস্থার অস্তিত্ব থাকা সত্বেও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাট-দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলেছে।