নগরীর পুকুর-দিঘী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:২৫:৪১ অপরাহ্ন
নগরীর ঐতিহ্যবাহী মাছুদিঘী ধংস হয়ে যাচ্ছে। দিঘীর অর্ধেক অংশ ইতোমধ্যেই ভরাট হয়ে গেছে। বাকি অংশে ফেলা হচ্ছে ময়লা অবর্জনা। এই সংক্রান্ত একটি খবর সম্প্রতি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, শুধু পানির প্রয়োজন নয়, আশপাশ এলাকার মানুষের জীবনের সাথে জড়ানো ছিলো একদিন মাছুদিঘী। কিন্তু বর্তমানে করুণ এক চিত্র সেই দিঘীজুড়ে। সিটি কর্পোরেশন সিলেটের প্রাচীন এই দিঘীটি রক্ষার জন্য ইতিবাচক কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করছে না।
পুকুর দিঘী ছড়া ও ডোবার শহর হিসেবেই অতীতে পরিচিত ছিলো সিলেট শহর। একসময় এ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ছড়াগুলো দিয়ে চলতো নৌকা। সুপেয় পানির জন্য ছিল অসংখ্য দিঘী। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে অনেক দিঘীর অস্তিত্বই এখন নেই। মানুষের মুখে টিকে আছে শুধু নামগুলো। জানা যায়, অতীতে ছোট-বড় ১৫টি দীঘি ও ৯টি ছড়া ছিল সিলেট শহরে। লালদিঘী, রামের দিঘী, মাছুদিঘী, মজুমদার দিঘী, দস্তিদারবাড়ি দিঘী, সাগরদিঘী, চারাদিঘী, ধোপাদিঘী, রাজারমাই দিঘী, কাজিদিঘী, এমসি কলেজের দীঘি, ইন্দ্রানীর দিঘী, কাজলদিঘী, কাস্টঘর দিঘী ও ব্রাহ্মণশাসন দিঘীর অনেকটিরই অস্তিত্ব এখন নেই। বর্তমানে কোনটি খেলার মাঠ, কোনটি পানিশূন্য, কোনটির বুকে উঁচু দালান বা মার্কেট। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ছিল বেকাদিঘী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দুই দশকে শহরের অন্তত ৬০টি পুকুর ও দিঘী ভরাট হয়ে গেছে। টিকে আছে ২৩টি। মধ্যযুগে অর্থাৎ ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বিদেশি পর্যটক ইবনে বতুতা সিলেটকে বলেছিলেন ‘সিলিচাতুলা’, অর্থাৎ সাগরের শহর। সুরমা নদী, ছোট-বড় ৯টি ছড়া, বড় বড় দীঘি মিলেই তিনি সিলেট শহরকে দেখেছিলেন সাগরের মতো। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন কল্পনাই করা যায় না। সে সময় সিলেটজুড়ে পুকুর দিঘী ছিলো পাড়ায় পাড়ায়। জানা গেছে, গত বিশ বছরে শুধু সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে অন্তত চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি পুকুর-দিঘী ভরাট হয়েছে। শুধু তাই নয়,এই শহরে একসময় দিঘীর মতো অনেকগুলো হাওর এবং বিলের সমাহার ছিলো। তেলিহাওর, বিলপার, কাজলহাওর- সেই সত্যই বহন করে। কিন্তু বর্তমানে নগরীর ভেতর কোনো হাওর কিংবা বিলের অস্তিত্ব নেই।
নগরীর পুকুর দিঘী জলাশয় বিলীন হওয়ার এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে হবে। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলো সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রচলিত জলাধার রক্ষা আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে মালিকানা থাকা সত্বেও কেউ দিঘী ভরাট করাতে পারবে না। ইতোপূর্বে নগরীর অভ্যন্তরের পুকুর-দীঘিসহ সকল জলাশয় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এজন্য ছয় সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়।আমরা আশা করি সিটি করপোরেশনের এই পদক্ষেপ সফল হবে।