বধ্যভূমি বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৩০:১৭ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য বধ্যভূমি রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে, আনাচে-কানাচে একাত্তরে গণহত্যা হয়েছে। ঢাকার রায়ের বাজারের বধ্যভূমির নৃশংস ইতিহাস দেশবাসী জানেন। মানুষ এমনভাবে পশু ও কসাই হতে পারে, তা বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু পাকিস্তানের জল্লাদসেনাদের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক মানুষ একাত্তরে মানুষ হত্যায় মেতে ওঠেছিল। রায়ের বাজারের মতো জেলায় জেলায় কত বধ্যভূমি সৃষ্টি করেছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল (পরে সার্জেন্ট জহুরুল হক) সহ ছাত্রদের আস্তানায় আস্তানায় তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে।
পালপাড়া বধ্যভূমি
নওগাঁর রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলায় পালপাড়া বধ্যভূমি অবস্থিত। এই বধ্যভূমিতে পালপাড়া গ্রামের ৫২ শহীদ ঘুমিয়ে আছেন। বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে কোনো রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছেন মাত্র।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল হানাদার বাহিনী গ্রামটি ঘিরে ফেলে এবং পুরুষদের একত্র করে ব্রাসফায়ারে হত্যা করে। নারীদের একটি ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। এখানে ৫২ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালে সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোনো রকমে ফলকে ৫২ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করান। বধ্যভূমিতে আর কোনো কাজ হয়নি। বধ্যভূমি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্যভূমিতে ৮ শতাংশ জমি দান করেছেন।
মাদারীপুরের ১৫ বধ্যভূমি
মাদারীপুরে ১৫টি বধ্যভূমি রয়েছে। প্রবীণরা মনে করেন জেলায় আরও বধ্যভূমি রয়েছে। অযত্ন, অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চিহ্নিত ওই ১৫টি বধ্যভূমিও হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
একাত্তরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হানাদার বাহিনী মাদারীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বিচার গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারী নির্যাতন চালিয়েছে। মাদারীপুরে অসংখ্য গণকবর বা বধ্যভূমির মধ্যে ১৫টি উল্লেখযোগ্য বধ্যভূমি রয়েছে। ২০১৪ সালে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০টি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠান হয়, তার মধ্যে ৪টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনোটিরই কাজ হয়নি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কুকরাইল মৌজার এআর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে রয়েছে জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। জানা যায়, এখানে প্রায় সাড়ে সাতশত নরনারী ও মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এবং সবাইকে একসঙ্গে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
গুয়াতলা বধ্যভূমি
গুয়াতলা বধ্যভূমি কালকিনির ফাসিয়াতলা ও শিবচরের গুয়াতলা বধ্যভূমি একাত্তরের গণহত্যার নির্মম সাক্ষী। গুয়াতলায় অনেক মানুষকে ধরে এনে হাত পা বেঁধে পার্শ্ববর্তী আড়িয়ালখাঁ নদে ফেলে দিয়ে হত্যা করে হানাদাররা। এছাড়া সদর থানার মিঠাপুর গণহত্যা, কালকিনির ফাসিয়াতলা, রাজৈরের সেনদিয়া ও কলকিনির ভুরঘাটার লালব্রিজ গণহত্যার নির্মম স্মৃতি স্বজনদের একখনও কাঁদায় ও তাড়িয়ে বেড়ায়।
কলাগাছিয়া পুকুরপাড় বধ্যভূমি
এখানে ৩৫ জন মুক্তিকামী মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। পুকুরপাড় বধ্যভূমিতে ৬২ জনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে জল্লাদ বাহিনী। কেন্দুয়া ইউনিয়নে পাশাপাশি কয়েকটি বধ্যভূমি রয়েছে। দুধখালি ইউনিয়নের মিঠাপুর শিকদারবাড়ি বধ্যভূমির ওপরে গড়ে ওঠেছে দ্বিতল ভবন, সরকারি ব্যাংক ও অন্যান্য অফিস ও স্থাপনা। দুধখালি ইউনিয়নের মিঠাপুর গোপীঠাকুরের বাড়ির পিছনে পুকুরের উত্তরপাশে বধ্যভূমি বর্তমানে বাঁশঝাড় ও আগাছায় ঘেরা। কেন্দুয়া ইউনিয়নের চৌহদ্দি হাটখোলা বধ্যভূমিতে ৩০ জন বাঙালিকে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এছাড়া মাদারীপুর পৌরসভার অধীন কুলপদ্বী বধ্যভূমিতে ১৬ জন মুক্তিপাগল মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের কেষ্ট বৈদ্যর বাড়ির পুকুর পাড়ে একটি গণকবরস্থান রয়েছে। এখানে ৭০ জনকে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। আমগ্রাম ইউনিয়নের পাখলা গ্রামের রাসু গাটিয়ার বাড়ির পুকুর পাড় বধ্যভূমিতে ৩০ জনকে, কদমবাড়ি ইউনিয়নের গণেশ পাগলের সেবা আশ্রমের পূর্বপাশে ৭৫ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে একই কায়দায় মাটি চাপা দেওয়া হয়। রাজৈর উপজেলায় অনেকগুলো বধ্যভূমি রয়েছে। সেগুলো হলো (১) খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের আলেক ফকিরের বাঁশঝাড় সংলগ্ন খালের সংযোগ স্থান (২) সেনদিয়া গ্রামের সিদ্দিক মাতব্বরের বাড়ির পাশে শচীন বারিকদারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে খালের পাড় (৩) ডা. রাসু বারিকদারের বাড়ির পাশে বাগানের ভেতরের খাল পাড় (৪) ছাতিয়ান বাড়ি গ্রামের পূর্ণচন্দ্র বৈদ্যর বাড়ির উত্তর পাড়।
সেনদিয়া ছাতিয়ান বাড়ি ও পলিতা গ্রামের ৬টি বধ্যভূমিতে ১২৭ জন নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা অমূল্যকুন্ডুর ঘর আগুন দিয়ে ঘরসহ তার বৃদ্ধ মাকে পুড়িয়ে হত্যা করে। এই সব শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল সেনদিয়া গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি শহীদ স্তম্ভ স্থাপন করেন। ওই শহীদ স্তম্ভে ১২৬ জন শহীদের নাম সংবলিত একটি ফলক বসানো হয়েছে। বিপুল লোকজনের উপস্থিতিতে ওই শহীদ স্তম্ভের উদ্ভোদন করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা অবাঙালি ফাদার মারিনো রিগন।
পরিকোট বধ্যভূমি
পরিকোট বধ্যভূমির অবস্থান কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে। এখানে অসংখ্য নিরীহ নিরপরাধ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে, নারীদের সম্ভ্রব কেড়ে নেয়া হয়েছে। হানাদার বাহিনী এখানে দিনের পর দিন জীবিত মানুষকে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখতো। নির্মমভাবে হত্যা করতো এবং লাশ বস্তাবন্দি করে বাঙ্গড্ডা-চৌদ্দগ্রাম সড়কের পরিকোট বেইলি সেতুর উপর থেকে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত। এছাড়া এখানে তিনটি গণকবর আছে, শত্রুরা মানুষ মেরে গণকবরে পুঁতে ফেলতো। ২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নাঙ্গলকোটের সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া এ বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ফলক উন্মোচন করেন। ২০২০ সালে বধ্যভূমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। পরে বধ্যভূমি দখল করে ধানের ব্যবসা করে আব্দুস সোবহানের ছেলে মানিক। এখানে শহীদ হন ডা. গৌরাঙ্গ সূত্রধর। এখানে এখনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি, শহীদদের তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি। দু’বছর আগে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও বধ্যভূমিটি দখলমুক্ত হয়নি।
সীমান্তে ৭ শহীদের সমাধি
নেত্রকোণার কলমাকান্দার কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১১৭২নং পিলারের কাছে ৭ শহীদের সমাধি অবস্থিত। এখানে চিরনিদ্রায় আছেন জাতির সাত শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে শহীদ হয়েছেন। তারা হলেন নেত্রকোণার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ ও মো. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মুহম্মদ ইয়ার মাহমুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, মো. নুরুজ্জামান, দ্বিজেন চন্দ্র বিশ্বাস এবং জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন। নাজিরপুরের যুদ্ধে নিহতদের এখানেই কবর দেওয়া হয় ও দাহ করা হয়। পরে শহীদ ও নিহতদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে রাখতে তাঁদের সহযোদ্ধারা এখানে নির্মাণ করেন সাত শহীদের সমাধি।
এখানে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকসেনাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের কাছে মুক্তিবাহিনীর সাধারণ অস্ত্র নিয়ে লড়াই করা ছিল এক অসমযুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন।
মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের এই সাত বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মরণে সহযোদ্ধারা ফুলবাড়ি গ্রামে নির্মাণ করেন সমাধিস্থল।
পিরোজপুরের বধ্যভূমি
পিরোজপুরে বেশ কয়েকটি বধ্যভূমি রয়েছে। পাকসেনা কর্ণেল আতিকের নেতৃত্বে এখানে গণহত্যা হয়েছে, নারী নির্যাতন হয়েছে। হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের সাক্ষ্য বহনকারী স্থানগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
একাত্তরের ২ মে কৃষ্ণনগর গ্রামের মন্ডল পাড়ায় ২৮ জন মানুষকে হত্যা করে পিরোজপুরে গণহত্যা শুরু করে হানাদার বাহিনী। তারা ৫ মে হত্যা করে পিরোজপুর মহকুমা প্রশাসক আব্দুর রাজ্জাক, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান ও মহকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদকে। এখানে রয়েছে হুলারহাটের কচা নদীর তীরের বধ্যভূমি, কদমতলার দোরগোলা গণহত্যা, টোনা ইউনিয়নের তেজদাস কাঠির খেজুরতলার গণহত্যা, জুজখোলার গণহত্যা, পাড়েরহাটের বধ্যভূমি, মঠবাড়িয়া উপজেলার সূর্য মণির বেড়িবাঁধের বধ্যভূমি, ধানী সাফা ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গণহত্যা, মিরুখালির গণহত্যা, সাপলেজার বাড়ৈবাড়ি গণহত্যা, বড় মাছুয়ার স্টিমার ঘাটের বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় সাড়ে তিন সহস্রাধিক মুক্তিকামী মানুষকে। স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা গ্রামের পেয়ারা বাগান ধ্বংস করে নির্বিচারে হত্যা করা হয় সহস্রাধিক সংখ্যালঘু মানুষকে।
পিরোজপুরের শহরে গ্রামে বিভিন্নস্থানে আরো অনেক বধ্যভূমি, গণহত্যা স্পট, নারী নির্যাতন ক্যাম্প রয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী অকাতরে প্রাণ বিসর্জনের স্মৃতিময় এজেলার অর্ধশতাধিক বধ্যভূমির মধ্যে শহর সংলগ্ন বলেশ্বর নদ খেয়াঘাটের বধ্যভূমিতে পিরোজপুর পৌরসভা এবং স্বরূপকাঠির বরছাকাঠি বধ্যভূমিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি স্মৃতিসৌধ এবং সম্প্রতি কুড়িয়ানায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে।
মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি বধ্যভূমিতে শহীদ পরিবারের প্রিয়জনরা একটি স্মৃতিসৌধ এবং বরছাকাঠির ‘সাত শহীদের এক কবরটি আত্মীয়-স্বজনরা পাকা করে রেখেছেন। অন্যান্য বধ্যভূমিগুলো যত্ন ও সংরক্ষণের অভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।
শরীয়তপুর মধ্যপাড়া বধ্যভূমি
একাত্তরের মে মাসে এখানে নারী, শিশু ও পুরুষসহ ৩৭৪ জনকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। এদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।
২০১০ সালে মধ্যপাড়ায় বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। একাত্তরের মধ্য জুলাইয়ে ভেদরগঞ্জের মহিষারে দুই শতাধিক হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ১১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মহিষারেই তাদের গণকবর দেওয়া হয়।
ঘোড়াঘাট লালদহবিল বধ্যভূমি
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে হানাদার বাহিনী একটা বড় ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। এখান থেকে দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চল, জয়পুর হাট, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর অঞ্চলে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে হানাদাররা নির্যাতন করে হত্যা করতো এবং বিশাল লালদহ জলাশয়ে ফেলে দিত। সে সময় এই লালদহ বধ্যভূমিতে কয়েক হাজার বাঙালিকে ধরে এনে হত্যা করে লালদহ বিলে ডুবিয়ে দেয়।
নরসিংদীর পাঁচ বধ্যভূমি
একাত্তর সালে নরসিংদীতে অনেকগুলো বধ্যভূমির সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচটি আলোচিত বধ্যভূমি হলো (১) পাঁচদোনা (২) পশ্চিম দত্ত পাড়া (৩) বড়িবাড়ি (৪) বারারচর এবং (৫) মেথিকান্দা।
একাত্তর সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এতে ১১৬ জন বীর সন্তান শহীদ হয়েছেন।
এ অঞ্চলে রয়েছে (১) বেলাবর বড়িবাড়ি বধ্যভূমি (২) মেথিকান্দা বধ্যভূমি (৩) পাঁচদোনা লোহারপুর বধ্যভূমি।
বেলাবর বড়িবাড়ি বধ্যভূমি
একাত্তর সালের ১৪ জুলাই পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাসহ বেলাব ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ৬৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাক জল্লাদ বাহিনী। নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে হত্যা করে তাদের লাশ ফেলে দেওয়া হতো আড়িয়ালখাঁ নদীতে। এরকম অনেক লাশ নদী থেকে তুলে নদীর তীরে বড়িবাড়িতে একসঙ্গে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
রায়পুরা মেথিকান্দা বধ্যভূমি
এখানে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো মুক্তিযোদ্ধাদের। পাঁচ মুক্তিযোদ্ধাসহ এখানে ৩০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা নির্যাতনের পর হত্যা করে। ওখানেই লাশগুলো মাটি চাপা দেওয়া হয়।
পাঁচদোনা লোহারপুল বধ্যভূমি
একাত্তরে পাক জান্তার নির্যাতন ও নির্মমতার সাক্ষী পাঁচদোনা লোহারপুল বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭ জনকে ধরে আনে। ২০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর তাদের শবদেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখে। স্থানটিকে চিহ্নিত করে রাখতে সহযোদ্ধারা এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, কলামিস্ট।