১৬০ আসনের বিপরীতে হলে উঠেছেন মাত্র ১৫ জন
পুড়িয়ে দেয়ার এক যুগ পর চালু হলো সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৪৯:১১ অপরাহ্ন
লবীব আহমদ, এমসি কলেজ প্রতিনিধি : দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর খুলেছে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস। শুরু হয়েছে ছাত্র ভর্তি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, হোস্টেলে উঠতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩ মাসে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী হোস্টেলে উঠেছেন। তারা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় খাবার দাবার সারছেন।
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। রাজনীতির নানা ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস। ২০১০ সালের সময় ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষের জেরে ছাত্রাবাসে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছু। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা না করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সারে। তখন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ছাত্রাবাসটিকে বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে কলেজের অভ্যন্তরে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটি রূপ নেয় ভুতুড়ে বাড়িতে। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় দেয়ালে শ্যাওলা জমে থাকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ছাত্রাবাসটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এর সংস্কার কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। তবে ছাত্রাবাসটি সংস্কার হলেও ছাত্র ভর্তি করতে গিয়ে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে পার করে দিয়েছে প্রায় ৫ বছর। তবে, বর্তমান অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো: রিয়াজ দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রাবাস চালুর উদ্যোগ নেন। এরপর চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রাবাসে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কলেজ কতৃর্পক্ষ। আবেদনের শেষ তারিখ ছিলো গত ১২ অক্টোবর। কিন্তু ওই নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্র হিসেবে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে ৮জন দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও ৭জন অনার্স-ডিগ্রীর শিক্ষার্থী।
কলেজ সূত্র জানায়, কলেজের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র ১টি ছাত্রাবাস। আসন সংখ্যা মাত্র ১৬০। এক সময় দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের এ ছাত্রাবাসে সিট প্রাপ্তি ছিল সোনার হরিণের মতো। এজন্য অনেক লবিংও করতে হতো।
ছাত্রাবাসের বর্তমান বাসিন্দা ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির আহমদ জানান, হোস্টেলে উঠার আগে মেসে থাকতে হতো। এখন হোস্টেলে উঠার সুযোগ পাওয়ায় হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করতে পারছি। এতে আমার খরচ ও এখন অনেকটা কমে আসছে।
ছাত্রাবাসের বাসিন্দা ও ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বড়লেখার সুজন আহমদ জানান, হোস্টেলে উঠার পূর্বে রাজনীতি সহ বিভিন্ন ভয় ছিল। কিন্তু, এখন পরিবেশ ভালো থাকায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি এবং স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ালেখাও করছি ।
কলেজ ছাত্রাবাসের তত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হাসান খন্দকার জানান, ছাত্রাবাস চালু হয়েছে ঠিকই, তবে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, ছাত্রাবাসে মোট আসনের ৬০ ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, ২০ ভাগ স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক (পাস) পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবেন।
তিনি আরও বলেন, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি শুরু হলে আশা করা যাচ্ছে ছাত্রাবাসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আবেদন পড়বে।
সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ জানান, দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রাবাসটি বন্ধ ছিলো। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ছাত্রাবাসটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হই। বর্তমানে ছাত্রাবাস পুরোপুরি প্রস্তুত। ভর্তি আবেদনের পর ১৫ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে অবস্থান করছেন। ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলে পুরোদমে ছাত্রাবাসটি চালু হবে বলে তার আশা।