রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, মাল্টায় ও জাপানে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ॥ প্রবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রসেস ত্বরান্বিত করতে হবে ॥ বাংলাদেশ ডেমোক্রেসির কেন্দ্রবিন্দু ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অবৈধ পথে বিদেশ গিয়ে ঝামেলায় পড়া থেকে বিরত থাকুন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৩৫:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : অবৈধ পথে বিদেশে গিয়ে ঝামেলায় পড়া থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। তিনি বলেন, বৈধভাবে বিদেশ যাবার নতুন নতুন রুট চালু হচ্ছে। এরই মধ্যে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও মাল্টায় যাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রেনিং নিয়ে জাপানে যাবারও সুযোগ এসেছে।
গতকাল রোববার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেইটের উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, অবৈধ পথে বিদেশে গিয়ে অনেকে পেটা খায়, অত্যাচারের শিকার হয়। বাপ-মাকে টাকা দেবার জন্য ত্যক্ত করে। অনেক সময় মারা যায়। এই দূরাবস্থা আমরা দেখতে চাই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটি খুবই দু:খজনক। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে একটা লোকও যাতে না মরে-সরকার সে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বৈধভাবে বিদেশ যাবার নতুন নতুন রুট চালু হচ্ছে। এরই মধ্যে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও মাল্টায় যাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রেনিং নিয়ে জাপানে যাবারও সুযোগ এসেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণ যখন বিদেশ যান, তখন প্রায়ই মিথ্যা কথা বলেন। একজন লোকের আসল বয়স হলো ৪৩, কিন্তু, ইতালিতে গিয়ে নামার পর বলেন, আমার বয়স ১৭ বছর। কারণ ১৮ বছরের নিচে হলে ৩ মাসের জন্য একটা ওয়ার্ক পারমিট পান। যার ফলে অধিকাংশ লোক মিথ্যা কথা বলেন। তাজ্জবের বিষয় হলো, অনেকক্ষেত্রে বয়সের পাশাপাশি বাবা-মায়ের বয়সও চেঞ্জ করে ফেলেন। ইন্ডিয়া-পাকিস্তানসহ দুনিয়ার কোন দেশে বয়স চুরি নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা লজ্জার বিষয়। বয়স চুরি রোধে এনআইডি’র মাধ্যমে পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিদেশী অবস্থানরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, সিলেটের বিরাট সংখ্যক নাগরিকের দ্বৈত নাগরিত্ব রয়েছে। অনেকেই বিদেশী নাগরিক। বৃটিশ কিংবা আমেরিকান। তারা ডুয়েল সিটিজেনশীপের জন্য প্রায়ই অ্যাপ্লাই করেন। কিন্তু, প্রসেসটা খুব ধীর গতির। আগে এজন্য চার মাস সময় লাগতো। কিন্তু, এখন বছর লাগে-এটা খুবই দু:খজনক। আমি আশা করবো, আগামীতে এই বৃটিশ বাংলাদেশী নাগরিকদের তাদের ডুয়েল সিটিজেনশীপের বিষয়টি যেন ত্বরান্বিত হয়। এজন্য তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সহযোগিতা কামনা করেন।
ই-গেইটের উদ্বোধনশেষে আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্য প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে ডেমোক্রেসির কেন্দ্রবিন্দু। কাজেই, আমাদেরে অন্যরা মাতব্বরী করে পরামর্শ দেয়ার দরকার নেই। তবে, প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন, আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও ইনক্লুসিভ হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই-উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমার দল বিশ্বাস করে, আমার ভোট আমি দেব, যারে খুশি তাকে দেব।’
মন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে। কোন দিন মিলিটারি কিংবা অন্য কোন কারসাজি করে ক্ষমতায় আসেনি। সুতরাং এ সম্পর্কে সন্দেহ-তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং তারা হয়তো জিনিসগুলো ঠিকমতো অবজার্ভ করছে না। ফলে তারা অনেক সময় অবান্তর বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তারা আগে ইতিহাস পড়ুক। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ অ্যালাও করবো এবং উই হ্যাভ নাথিং টু হাইড।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার ৮২ থেকে ৭৮ পার্সেন্ট জনগণ মনে করে, সেখানকার ডেমোক্রেসি দুর্বল। ৭৭ পার্সেন্ট রিপাবলিকানরা মনে করে, আমেরিকার গত প্রেসিডেন্সি ইলেকশন ওয়াজ এ ফ্রড ইলেকশন, স্টোলেন ইলেকশন। আমাদের দেশেও কিছু লোক এ ধরণের আছে-এ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় অ্যাভারেজ ৫০ পার্সেন্ট এর নিচে লোক ভোট দেয়, আর আমাদের দেশে ৭২-৮০-৯০ পার্সেন্ট লোক ভোট দেয়। সর্বশেষ গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন এর প্রমাণ। আমাদের দেশের ইলেকশন খুবই পার্টিসিপেটরি, স্বত:স্ফূর্ত ও আনন্দময়। সেখানে মাত্র তিন মাস আগে ইলেকশন ক্যাম্পেইন শুরু হয়, আর আমাদের ইলেকশন ক্যাম্পেইন শুরু হয় এক বছর আগে।
এই দেশের সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সত্তরের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ মেজরিটি পেল, তাদেরকে সরকার গঠন করতে দিল না, জেনোসাইড শুরু হবার পর আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে টু আপহোন্ড ডেমোক্রেসি, টু আপহোল্ড জাস্টিস, টু আপহোল্ড হিউম্যান রাইটস এন্ড টু আপহোল্ড হিউম্যান ডিগনিটি। আমরা যুদ্ধ করেছি, টু আপহোল্ড হিউম্যান ডিগনিটি। এদেশের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই প্রিন্সিপল আছে। কাজেই আমাদের অন্যরা মাতব্বরী করে পরামর্শ দেবার দরকার নেই। উনারা নিজেদের আয়নায় দেখুন।