সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
ছাতকে প্রাচীনতম মোহাম্মদীয়া মুসাফিরখানা ভেঙ্গে মার্কেট তৈরীর চেষ্টা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৫৫:২৯ অপরাহ্ন
ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : ছাতকের প্রাচীনতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদীয়া মুসাফিরখানা ও পঞ্জেগানা মসজিদ ভেঙ্গে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক মার্কেট গড়ে তুলার অপচেষ্টার প্রতিবাদে ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বাদী হয়ে শহরের বাগবাড়ী এলাকার আলতাব মিয়ার পুত্র ইকবাল হোসেন, একরাম হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পৃথক মোকদ্দমা দায়ের করেন।
গতকাল রোববার দুপুরে শহরের সোলেমান কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী এক লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, প্রায় ৭৫ বছর আগে শহরের প্রধান সড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মোহাম্মদীয়া মুসাফিরখানা ও পঞ্জেগানা মসজিদ। শহরে আগত মুসাফিরদের থাকা ও ধর্মীয় উপাসনা করার লক্ষ্যে বাগবাড়ী এলাকার মৃত হাজী উসমান মিয়ার স্ত্রী মৃত ছুরতুন্নেছা বিবি তার নিজ বাড়ির সামনে আড়াই শতক ভূমি মুসাফিরখানা ও পঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণের জন্য ওয়াকফনামা-দানপত্র সম্পাদন করে দিয়েছিলেন। দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর পিতা দেওয়ান হাজী আলম রাজা চৌধুরীর নিজ অর্থায়নে মুসাফিরখানা নির্মাণ করে দেয়ার এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে ছুরতুন্নেছা বিবি ১৯৪৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাগবাড়ী মৌজার, জেএল নং-২১৬, খতিয়ান নং-৫৮ এবং ৮৬৯/৮৮০ দাগের আড়াই শতক ভূমি ৪১৭২ নং দলিলে ওয়াকফনামা রেজিষ্ট্রারী সম্পাদন করে মুসাফিরখানা পরিচালনা কমিটি বরাবরে হস্তান্তর করেন। এ ভূমি তার উত্তরাধিকারী কারো কোনরকম স্বত্ব বা দাবি থাকবে না বলেও দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ করেন তিনি। সম্প্রতি একটি চক্র জাল কাগজপত্র সৃজন করে ভূয়া মালিকানা ও কাল্পনিক স্বত্বাধিকারী সেজে ওই ভূমিতে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের লক্ষ্যে ৭৫ বছরের পুরাতন মুসাফিরখানা ভবনটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। গভীর রাতে মুসাফিরখানা ভবন ভাঙ্গার বিষয়টি অবহিত করলে থানা পুলিশ বেআইনীভাবে ভাঙ্গা কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পরে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব (মোকদ্দমা নং- ৫৬/২২) এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে কার্যবিধি ১৪৪ ধারা মোতাবেক মোকদ্দমা (নং- ৫৪০/২২) দায়ের করেন তিনি। উভয় মামলায় এ ভূমিতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন আদালত। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভবন ভাঙ্গা অব্যাহত রাখলে ঘটনাস্থল থেকে ইকবাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ। পরে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, মুসাফিরখানা দখলে নিয়ে প্রতিপক্ষরা ভূয়া কাগজপত্র দাখিল করে পৌরসভা থেকে ৩ নামে পৃথক হোল্ডিং ও বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মিটার গ্রহণ করে। যা পরবর্তিতে পৌর কর্তৃপক্ষ এসব হোল্ডিংয়ের এসেসমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। একইভাবে বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন না করতে পারায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদান করলে তারা সময় চেয়ে আবেদন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল হক, স্থানীয় আশিদ আলী, জমির উদ্দিন, আরশ আলী, কবির আহমদ, হাজী মনির আলী, বাবুল মিয়া, নুরুল ইসলাম মেম্বার, আশরাফ চৌধুরী প্রমুখ। এসময় অধ্যাপক ফখর উদ্দিন স্বপন, স্থানীয় আশরাফল আলম, আব্দুন নূর, সিরাজ মিয়া, ইলিয়াছ মিয়া, কবির মিয়া, সেলিম আরাফাত, দৌলত মিয়া, আনোয়ার হোসেন, ছাব্বির হোসেন, জিলু মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।