মানসিক রোগি বাড়ছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৪৫:০৬ অপরাহ্ন
দেশে বাড়ছে মানসিক রোগি। জনগোষ্ঠির ১৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল পরিকল্পনা ২০২০-৩০ এর অবহিতকরণ সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মানসিক সমস্যায় বিশ্বে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের ১৮ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বা তিন কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে এই সমস্যায় ভুগছে। অন্যান্য অনেক রোগেও এমনটা হয় না। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এসব রোগীর বড় একটি অংশ শিশু।
শুধু আমাদের দেশ নয়, সারা বিশ্বে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে, করোনা মহামারির পর বেশকিছু গবেষণায় এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন প্রকার রোগের মত মানসিক রোগও যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। গবেষকদের মতে- দ্বন্দবহুল কলহময় পারিবারিক অশান্তি, নিরাপত্তাহিনতা, বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা এবং দ্বিধা দ্বন্দ থেকে মানসিক রোগের উৎপত্তি হতে পারে। বংশগত কারণসহ শারীরিক নানা সমস্যার কারণেও এই রোগ হতে পারে। মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চিত ও দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা দায়ি। শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সুস্থ বিনোদনের অভাব। শহর বন্দর সর্বত্র খেলার মাঠ না থাকায় আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণেরা বিনোদনের জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। খেলার মাঠের অভাব, সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ কমে যাওয়া, স্কুলের পড়ার চাপ ইত্যাদি আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের করেছে বাক্সবন্দী। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে- চঞ্চলতা, প্রলাপ বকা ও আক্রমনাত্মক আচরণ প্রভৃতি উপসর্গসহ জিনিসপত্রের ক্ষতিসাধন বা ভাঙচুর করা। সবচেয়ে বড় কথা, পারিবারিক বন্ধন, পারষ্পরিক সহমর্মিতা থাকলে কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে না। একজন মানসিক রোগির জন্য অবশ্যই পারিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটা উন্নত পরিবেশ দরকার।
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগি এক পর্যায়ে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে। তাই মানসিক রোগ থেকে দূরে থাকার ব্যবস্থা করাই জরুরি। এই সংক্রান্ত সরকারের একটি কর্মকৌশল এবং একটি আইনও আছে। কিন্তু সবকিছুর উর্ধে দরকার সকলের সহযোগিতা। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। দরকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এটি যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। জানা গেছে, দেশের দুইশ উপজেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা যাতে কাগজেপত্রে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটাই আসল কথা।