৮০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:০৩:৪২ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর পবিত্র মাজার শরিফ দরগাহ মহল্লায় পবিত্র মসজিদের উত্তরের দিকে অবস্থিত। এখানে হজরত শাহজালালের (রহ.) সঙ্গী আরও কয়েকজন পীর-এ কামিলের কবর রয়েছে। হজরত শাহজালালের (রহ.) আস্তানাও ছিল এখানে। ইয়েমেন থেকে আসা ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি সাধক হজরত শাহজালাল (রহ.) ভারতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম হয়ে সিলেটে আসার পথে কুমিল্লার সদর উপজেলার বিবিরবাজার স্থলবন্দর সংলগ্ন গাজীপুর এলাকায় অবস্থান করেন। এই স্থানে বসে তিনি বিশ্রাম নেন। এখানে বসেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর কোন সঙ্গী দেশের কোন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করবেন। অতঃপর তিনি সিলেটে আগমন করেন। তখন কুমিল্লা অঞ্চল ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে। সে সময়ের ত্রিপুরার রাজা মহান সাধকের নামে কয়েক একর জমি ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। হুজুরের আস্তানার পাশেই রয়েছে প্রায় ৮ শতাব্দীর পুরোনো একটি মসজিদ ও এক কবরস্থান। পুরোনো মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে হুজুরের আস্তানার দক্ষিণ পাশে রয়েছে তাঁর রেখে যাওয়া তাঁর সঙ্গীদের একজন শাহজালাল আউলিয়ার মাজার। এখানে সম্প্রতি নতুন করে একটি মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়েছে।
শাহজালাল (রহ.) এর সিলেট আগমন
ধর্মীয় গবেষকদের গবেষণার সূত্র অনুযায়ী জানা যায় যে, ১৩০৩ সালে ৩২ বছর বয়সে হজরত শাহজালাল (রহ.) ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সিলেট জেলায় তসরিফ এনেছিলেন। হজরত শাহজালাল (রহ.) স্বপ্নে দেখেছিলেন, তিনি ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচার করছেন। তিনি তাঁর মামা সৈয়দ আহমদ কবিরকে স্বপ্নের কথা জানালে তিনি তাঁকে ভারতবর্ষে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শাহজালাল (রহ.) মামার কথা মতো ভারতবর্ষে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মামা সৈয়দ আহমদ কবির ভাগিনা শাহজালাল (রহ.) হাতে একমুঠো মাটি তুলে দিয়ে বলেন, যে স্থানের বা জায়গার মাটির সঙ্গে এই মাটির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণের মিল পাবে, ধর্ম প্রচারের জন্য সেখানেই আস্তানা গড়বে। হজরত শাহজালাল (রহ.) মক্কাশরিফ থেকে ধর্ম প্রচার অভিযানে একাই যাত্রা শুরু করেন। সেসময় দরবেশ হুজুরের শিষ্যের সংখ্যা ২৪০ জন বলে আন্দাজ করা হয়। গবেষকদের সূত্র থেকে আরও জানা যায়, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিবিরবাজার স্থল বন্দরের একটু আগে হাতের বাম দিকে রয়েছে হজরত শাহজালাল ইয়েমেনি (রহ.) এর আস্তানা। পাশে বড় একখানি মসজিদ। পুরোনো মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে আস্তানার পাশে টিলা আছে। এ টিলায় হজরত শাহজালাল (রহ.) সহ কয়েকজন আউলিয়া বিশ্রাম নিয়েছেন। এটা একটা ছোট টিলা ছিল, জঙ্গল ছিল। এখানে হরিণ, বাঘ, বানর সহ বিভিন্ন প্রাণী ঘুরে বেড়াতো।
জানা যায়, প্রায় ৮০০ বছর আগে হজরত শাহজালাল (রহ.) কয়েকজন সাথী নিয়ে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যাওয়ার পথে এখানে আস্তানা গড়ে তুলে ছিলেন। তিনি এখানে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন। এখানে ৮০০ বছর আগে হজরত শাহজালাল (রহ.) মসজিদ নির্মিত হয়। এই প্রাচীন মসজিদ হজরত শাহজালাল (রহ.) এর স্মৃতি বহন করছে।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, কলামিস্ট।