বিশ্ব ইজতেমা শুরু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:২৭:৪৭ অপরাহ্ন
মহামারির কারণে দু’বছর বিরতির পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। দু’পর্বের ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে আজ। চলবে ১৫ই জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ২০শে জানুয়ারি থেকে ২২শে জানুয়ারি পর্যন্ত। ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে বিশাল ময়দানে তাবলিগ জামাতের এই বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯৬৭ সাল থেকে। মুসল্লিদের স্থান সংকুলানের সুবিধার্থে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমাকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়।
তাবলিগ’ অনুসারীদের বৃহত্তম সমাবেশ হচ্ছে এই বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ পৌঁছানো, প্রচার করা, প্রসার করা, বয়ান করা, চেষ্টা করা, দান করা ইত্যাদি। অর্থাৎ একজনের অর্জিত জ্ঞান বা শিক্ষা নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টার মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছানোকে তাবলিগ বলে। জানা যায়, ১৯২৭ খৃস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস (রাহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামী দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমারও আয়োজন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দিন দিন বাড়তে থাকে তাবলিগের প্রচার-প্রসার ও ব্যাপকতা। তাবলিগের সাথী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীতে ইজতেমা আয়োজন শুরু হয়। বাংলাদেশে তাবলিগের দাওয়াতি কাজ শুরু হয় ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ থেকে। তখন মাওলানা আব্দুল আজিজ (রাহ.) বাংলাদেশে ইজতিমার হাল ধরেন। সে সময় থেকেই বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজ বা প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা আরম্ভ হয়। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগামে তৎকালীন হাজি ক্যাম্পে দ্বিতীয়বারের মতো তাবলিগের সম্মেলন বা ইজতেমার আয়োজন করা হয়। তার ১০ বছর পর ১৯৫৮ সালে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে তাবলিগের এ সম্মেলন শুধুমাত্র ইজতেমা নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতিমা আয়োজন করা হয়। সে বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলিগের এ ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও তাবলিগের সাথীরা অংশ গ্রহণ করে। আর সে বছর থেকেই এ ইজতেমাকে বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৬৬ সালের পর থেকে প্রতি বছরই টঙ্গীর তুরাগ নদীর উত্তর পূর্ব তীর সংলগ্ন ১৬০ একর জায়গার বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ ইজতেমা।
প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। আগত মুসল্লিদের তাবলিগের কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। মুসল্লিদের খন্ড খন্ড জামায়াতে বিভক্ত করে বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগের কাজে পাঠানো হয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে ইসলামের পথে আগমনের আহ্বান জানানো। তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেকে শুধরানোর সুযোগ থাকে এবং দীর্ঘ সময় ধরে একাগ্রতার সাথে আল্লাহ পাকের এবাদত করা যায়। এটাই তাবলিগের প্রধান শিক্ষা।