সিলেটের ডাক ও আশিক মোহাম্মদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন
এনামুল হক জুবের
সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক, ছড়াকার, গীতিকার, সকলের প্রিয় অজয় পাল-এর মৃত্যুতে সিলেটের সাংবাদিক মহলে এখনো শোক বিরাজ করছে। যুক্তরাজ্যে গত ৮ জানুয়ারী তিনি পরলোকগমন করেন। গত বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে তাঁর স্মরণে সভার আয়োজন করা হয়। সভা শেষে সিলেটের ডাক-এর চীফ রিপোর্টার সহকর্মী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানালেন, আমাদের প্রাণবন্ত সহকর্মী ও আমার সহপাঠি, সিলেটের ডাক-এর সাবেক সাব এডিটর আশিক মোহাম্মদ-এর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আশিক কয়েক বছর আগে থেকেই জটিল রোগে ভুগছেন। এ সংবাদ জানার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই সে পৃথিবীর মায়া ছিন্ন করে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তা বিশ^াস করতে কষ্ট হচ্ছে। কয়েক মাস আগে সিলেটের ডাক-এর সাবেক স্টাফ রিপোর্টার ব্যাংক কর্মকর্তা জাবেদ আহমদ যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে আশিককে দেখতে যানন ও তাঁর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। লন্ডনে থাকাকালেই জাবেদ জানিয়েছিলো, আশিকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এ সংবাদ জেনে আমরা সকলেই খুশী হই ও তার পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহপাকের দরবারে প্রার্থনা করি। এরও আগে গত বছরের ১৯ এপ্রিল সিলেটের ডাক কার্যালয়ে আশিকের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আশিক কিছুটা সুস্থ হয়ে ওমরা হজ¦ পালন করার আকাংখা ব্যক্ত করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হজে¦ যাওয়া আর তার হয়ে উঠেনি। তার অসুস্থতাকালীন সময়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিকরা বিশেষ করে সেখানে অবস্থানরত সিলেটের ডাক-এর সাবেক সহকর্মীরা যেভাবে তার কাছে ছুটে যান, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তা ভালোবাসার এক বিরল নিদর্শন। তাদের কাছ থেকেই আমরা প্রতি নিয়ত আশিকের খবর জানতাম।
৮৫-৮৬ সালে সাপ্তাহিক সিলেট বাণী পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার পদে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু হয়। আমি তখন মদন মোহন কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র। শহরতলীর লালাবাজার থেকে প্রায়ই আশিক নানা বিষয়ে ওই পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণ করতো। একদিন ক্লাশে তার সাথে পরিচয় হয়। সে একজন ভালো সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্রবল আকাংখা ব্যক্ত করে আমার সহযোগিতা কামনা করে। সে সময় আমি প্রায়ই কলেজ থেকে পত্রিকা অফিসে চলে যেতাম। পরিচয় হওয়ার পর আশিকও আমার সাথে যেতো। সেখানে আমার কাছে সংবাদ লেখার নানা কলা-কৌশল শেখার চেষ্টা করতো। বাণীতে বছর খানেক থাকার পর স্নাতক পরীক্ষার জন্য চাকুরী ছেড়ে চলে আসলে আশিক আমার পদে স্থলাভিসিক্ত হয়। পরীক্ষা দিয়ে ৮৭ সালে আমি সিলেটের ডাক-এ যোগ দেই। কয়েক বছর পর স্টাফ রিপোর্টার পদে আশিক মোহাম্মদ এসে যোগদেয়। এ ছাড়া আরো অনেক মেধাবী সংবাদ কর্মীর যোগদানের ফলে সিলেটের ডাক-নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করে। পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পপতি, দানবীর ড. রাগীব আলীর পৃষ্ঠপোষকতায় সিলেটের ডাক এ অঞ্চলের মানুষের প্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয়। তৎকালীন নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার-এর নেতৃত্বে সকল সংবাদ কর্মীরা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে থাকেন। এ সময় আশিক অল্পদিনেই একজন ভালো রিপোর্টার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। বার্তা সম্পাদক হিসেবে আমি যখনই তাকে কোন দায়িত্ব দেই সে তা হাসিমুখে পালন করে।
বর্তমান সময়ের তথ্য প্রযুক্তির এমন সুযোগ সুবিধা সেসময় না থাকলেও পুরো বিভাগের সংবাদ সংগ্রহে আশিক যে দক্ষতার পরিচয় দেয় তা দেখে সকলেই অবাক হন। জাতীয় দৈনিকের সিলেটের প্রায় সকল সাংবাদিকরা প্রতিদিনই আশিকের দ্বারস্থ হতেন আলোচিত কোন সংবাদ আছে কিনা। তার দক্ষতার জন্য আমি তাকে ‘ডাকের খুঁটি’ বলে মাঝে মধ্যে রসিকতা করতাম। সেই রসিক মানুষ সকলের প্রিয় আশিক মোহাম্মদের ইন্তেকালে শুধু সিলেটের ডাক পরিবার নয়, গোটা বিভাগের সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মহান আল্লাহপাক যেন তাকে বেহেশত নসীব করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্যধারনের তৌফিক দেন-এই কামনা করি।