লালবাজারে মাছের মেলা ও প্রদর্শনী গ্রামবাংলার মাছের বিপুল সমারোহ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:০২:৩৩ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম
গ্রামের চেয়ে শহরে মাছের চাহিদা বেশী। তবে চাহিদা থাকলেও বিভিন্ন কারণে শহরে বসবাসকারী মানুষের ভাগ্যে হাওর বিল জলাশয়ে বিচরণকারী দেশীয় প্রজাতির মাছ সব সময় জুটেনা। তাই, মানুষের চাহিদা বেশী থাকায় বাধ্য হয়ে বাজারগুলোতে চাষের মাছের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। অবশ্য বড় বাজারগুলোতে বিশেষ কোনো মৎস্যমেলা ঘিরে গ্রামবাংলার পরিচিত সেই মাছগুলোর দেখা মিলে।
যেমনটি মিলছে সিলেটের প্রাচীন লালবাজারে। পৌষ-সংক্রান্তিকে উপলক্ষ করে লালবাজারে মৎস্যমেলা ও মাছের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার থেকে। সেই মেলায় উঠেছে বড় বড় আকৃতির হাওরবিলের দেশীয় প্রজাতির মাছ। মেলার মাছ ঘিরে সকাল থেকে মানুষের পদচারণায় মুখর বাজারটি।
শহরে মাছের মেলা কিংবা প্রদর্শনী- শব্দটি যেকোনো মানুষের মধ্যে অন্যরকম কৌতুহল জাগায়। যেখানে সবসময় চাহিদার সব মাছ পাওয়া যায়না, সেই শহরে বসেছে তিনদিনের মেলা। সেই মেলায় উঠেছে বড় মাছের পাশাপাশি ছোট মাছগুলো। দেখা মিলছে-বিয়াল্লিশ কেজি ওজনের কাতল, পনের থেকে বিশ কেজি ওজনের বোয়াল, বারো থেকে চৌদ্দ কেজি ওজনের চিতল, বিশাল আকৃতির গজার, রুই, আইড়, কালিয়ারা মাছের বিশাল সমারোহ। সাথে রয়েছে রূপালী ইলিশ, বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি।
লালবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমদ জগলু বলছেন, গত বছরের মতো এবারো আমরা বাজারের শতাধিক দোকানে হাওর এবং বিলের মাছ তুলেছি। সাথে রয়েছে নদী থেকে জেলেদের আহরণকৃত বিশাল আকৃতির মাছ। যেগুলো সবসময় টাকা দিয়েও পাওয়া মুশকিল। তিনি বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালী হলেও সবসময় সব মাছ পাইনা। এজন্য মেলায় আমরা বেশী গুরুত্ব দিয়েছি দেশীয় মাছের উপর। আর সেই মাছগুলো কিনার চেয়ে দেখার ভিড় বেশী। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বড় বড় মাছের সাথে ছবি উঠছেন।
এক সময় দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে মিলত প্রতিদিন। শহরেও বাজারের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ীরা পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করতেন সেই মাছগুলো। দেশীয় এসব মাছের মধ্যে ছিলো কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, শোল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বুড়াল, বাইম, চিংড়ি, গজার, টাকি, চিতল, গুতুমসহ অনেক মাছ। তবে এখন আর সেসব মাছ বাসাবাড়িতে যেমন ব্যবসায়ীরা সবসময় ফেরি করেন না, তেমনি দেখা যায়না শহরের বাজারে। দেশি মাছের বদলে এখন বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে চাষের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, ক্রস ও কার্প জাতীয় মাছসহ আরো অনেক প্রজাতির মাছ। অন্যদিকে জেলেদের জালেও আগের মতো ধরা পড়েনা সবসময়।
অন্যদিকে বাসা-বাড়ি, হোটেল রেস্তোরাঁসহ বহুবিধ কারণে শহরে রয়েছে সবচেয়ে বেশী মাছের চাহিদা। সেই চাহিদা কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়, দূরের গ্রামের হাওরবিলের মাছ দিয়ে। তবে বড়বাজারগুলোর দিকে নজর থাকে গ্রাম-গঞ্জ, শহরতলীর মৎস্য আহরণকারী জেলেদের। ফলে প্রায় সময় তাদের জালে ধরা পড়া, হাওর বিল কিংবা নদী থেকে সংগ্রহ করা মাছগুলোর ঠাঁই হয় বড় বাজারগুলোতে। যেমনটি দেখা মিলছে লালবাজারের মাছ প্রদর্শনীতে। বাজারে মাছমেলা ও প্রদর্শনীতে এসে বোয়াল মাছ কিনেছেন সুফিয়ান নামে একজন প্রবাসী প্রবীণ। কথা হলে তিনি জানান, ‘শুধু শহরে নয়, এখন গ্রামেও মাছ কিনে খেতে হয়। তবে আমরা ছোটবেলায় কোনোদিন মাছ কিনে খাইনি। তিনি বলেন, লালবাজারে এই মেলা গ্রামবাংলার সোনালী অতীতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।’
বাজারে বিয়াল্লিশ কেজি ওজনের কাতল মাছ উঠেছে আলাউদ্দিন মিয়ার দোকানে। কাতল ছাড়া আরো কয়েকটি বড় মাছ দেখতে ভিড় তার দোকানে। কথা হলে তিনি জানান, সখ করে অনেকেই মেলা থেকে বড় মাছ কিনে নিয়ে যান। আশায় আছি হয়তো সেরকম কেউ আসে। তা না হলে কেটে বিক্রি করা হবে।
একইভাবে অন্তত তেরো কেজি ওজনের বোয়াল মাছ রয়েছে শরিফ মিয়ার দোকানে। বলা যায়, বাজারের সবগুলো দোকানেই এভাবে তরতাজা এবং বড় আকৃতির মাছ প্রদর্শিত হচ্ছে। বড় মাছের পাশাপাশি ছোট মাছও কম নয়। মলা, টেংরা, পুটি থেকে শুরু করে শিং মাছও আছে মেলায়।
বাজার কমিটির সভাপতি এনায়েত হোসেন জানান, শুধু বিক্রির জন্য নয়, মেলা আয়োজনের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ মানুষের সামনে তুলে ধরা। যেগুলো সবসময় দেখা যায়না, আবার এ প্রজন্মের অনেকে অনেক মাছের নামও জানেনা। গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মাছমেলা ও প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মেলার উদ্বোধন করেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের সেক্রেটারী আব্দুর রহমান জামিল, পরিচালক সুয়েব আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সহসাধারণ সম্পাদক আহমাদ সেলিম, লালবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, লালবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এনায়েত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক গোলজার আহমদ জগলু, সদস্য দারা মিয়া, হিরা মিয়া, সালাউদ্দিন প্রমুখ।