সিলেটের ডাক-এর সাবেক সাব এডিটর আশিক মোহাম্মদ আর নেই
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:১৯:৫০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সাব এডিটর, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশিক মোহাম্মদ আর নেই। গতকাল শুক্রবার লন্ডন সময় ভোর ৪টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়) পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীণ এলাকার হ্যাকনি রোডস্থ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র সন্তান, মা, ভাই-বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসে ও দেশে অবস্থানরত তার সাবেক সহকর্মী, শুভাকাঙ্খী, বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার জানান, মরহুম আশিক মোহাম্মদের নামাজে জানাজা আজ শনিবার বাদ জোহর পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেইন মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে ফরেস্ট গেইট সিমেট্রিতে তার দাফন সম্পন্ন হবে। সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার আরো জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি যখন অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন আশিক মোহাম্মদের স্ত্রীর ফোন কল পেয়ে তিনি তার বাসায় চলে যান। খবর পেয়ে অনেক পুরনো সহকর্মী ও তার (আশিক) অনেক স্বজনও বাসায় ছুটে আসেন। সেখানে অবস্থানকালে ডিস্ট্রিক নার্স তাকে জানিয়েছিলেন, তার কিডনী ও লিভার কাজ করছে না। তিনি ছিলেন অনেকটা সংজ্ঞাহীন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার ভোরে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
সাংবাদিক আশিক মোহাম্মদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের রাজিবাড়ি ভরাউট গ্রামে। তার পিতা মরহুম মখন মিয়া। তারা ছিলেন ৮ ভাই, ৩ বোন। ভাইদের মধ্যে তার অবস্থান ছিলো দ্বিতীয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। মরহুমের ছোট ভাই নান্নু মিয়া জানান, ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে তার বৃদ্ধা মা অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শোকে কাতর। ভাই-বোনদের মধ্যে একভাই সৌদি আরবে ও এক ভাই বাহরাইনে অবস্থান করছেন। তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সাব এডিটর, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও টাওয়ার হ্যামলেটস-এর কর্মকর্তা মাহবুব রহমান জানান, আশিক মোহাম্মদ সেখানকার বাংলা পত্রিকা সাপ্তাহিক জনমত-এ কাজ করেছেন। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত হন। এই ব্যবসার সুবাদে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরেই কেটেছে তার প্রবাস জীবনের বেশির ভাগ সময়। সংসার জীবন শুরু করার পর স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে ৪ বছরের ফারাজকে নিয়ে লন্ডনে স্থায়ী হয়েছিলেন। মাস দুয়েক আগে দেশ থেকে তার আম্মা ও এক ছোট ভাইকে আনার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় মা ছেলের দেখা আর হয়নি।
সাংবাদিক মাহবুব রহমান আরো জানান, গত কয়েক বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন আশিক। লড়ছিলেন স্পাইন (মেরুদন্ড) ক্যান্সারের সাথে। পূর্ব লন্ডনের রয়েল লন্ডন হাসপাতালে প্রায় ৭/৮ মাস একটানা ভর্তি ছিলেন। অনেকটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে উজ্জীবিত আশিক তার মাকে নিয়ে সৌদিআরবে উমরাহ করার পরিকল্পনা করছিলেন। ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহের জন্য তাকে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। এবার বাসায় দেয়া হয় জীবনের শেষ সময়টা স্বজন পরিজনদের সাথে কাটানোর জন্য। ১৩ জানুয়ারি গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টায় তিনি পাড়ি জমান অন্যলোকে।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন
দৈনিক সিলেটের ডাক-এর প্রধান বার্তা সম্পাদক এনামুল হক জুবের জানান, আশিক মোহাম্মদ ১৯৮৬ সালে সাপ্তাহিক সিলেট বাণীতে কাজ করার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এর আগে তিনি তার নিজ এলাকা লালাবাজার এলাকার সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রেরণ করতেন। এক পর্যায়ে সাপ্তাহিক সিলেট বাণী দৈনিকে রূপান্তর হলে সেখানে কয়েক বছর কাজ করার পর নব্বই সালের দিকে তিনি সিলেটের বহুল প্রচারিত দৈনিক সিলেটের ডাক-এ যোগ দেন। এ পত্রিকায় দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি মূলত কারেন্ট ইভেন্ট কাভার করতেন। যে কারণে রাজনীতিবিদ-প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে ছিল তার গভীর সখ্যতা। তিনি ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবেরও সদস্য।
১৯৯৮ সালে তিনি বিলেতে পাড়ি জমান। সেখানকার সাপ্তাহিক জনমত-এ তিনি কিছুদিন কাজ করেন। ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য। লন্ডনের সাংবাদিক মহলে অগ্রজ সাংবাদিক হিসাবেই তার খ্যাতি ছিল। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।