শহরে গ্রামীণ ঐতিহ্য প্রদর্শনী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:০৩:২৩ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম
ঢেঁকিতে ধান ভানা-আমাদের গ্রামীণ জীবনের প্রাচীন ঐতিহ্য। নতুন ধান কাটার পর একসময় গ্রামের ঘরে ঘরে ঢেঁকির শব্দ শোনা যেত। কিন্তু, আজ সেই ঢেঁকি, সেই শব্দ রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। পঞ্চাশ দশকের দিকে শুরু হয় চাল কলের প্রচলন। তারপর থেকেই ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সেই ঐতিহ্য শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরেছে শ্রীহট্ট প্রকাশ নামে একটি প্রকাশনী সংস্থা। ঢেঁকির সাথে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ নানা ঐতিহ্য ঠাঁই পেয়েছে সেই প্রদর্শনীতে।
ফসলের মাঠের নানা উপকরণ থেকে শুরু করে প্রদর্শনীতে রয়েছে নিভের কলম এবং কালি, কলেরগান, মাটির চুলো, মাটির হাঁড়ি পাতিল, ল্যাম্প, হারিকেন। সেকালের কাঠ দিয়ে তৈরি খড়ম, চিঠির বাক্স, বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণসহ নানা লোকজ ঐতিহ্যের দেখা মিলছে সেখানে।
শহুরে জীবনে বেড়ে ওঠা এ প্রজন্মের অনেকেই এগুলোর সাথে পরিচিত নন। সেই শূন্যতা পূরণে-এই প্রদর্শনী যেন শহরের ইটসুরকির বহুতল ভবনের ভিড়ে একচিলতে গ্রামীণ অতীত। যেগুলো একসময় গ্রামের প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি আঙিনায় পড়ে থাকতো। এখনো সেগুলো হারিয়ে যায়নি গ্রাম থেকে। তবে শহরের জীবন, সেই ঐতিহ্য থেকে অনেক দূরে। তাই প্রদর্শনীতে প্রতিটি জিনিস দেখতে আসা তরুণ-তরুণীদের ছিলো নানা জিজ্ঞাসা। তারা প্রতিটি গ্রামীণ উপকরণ দেখার সাথে সেগুলোকে জানারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
নয়ন নামে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, আমার বাড়িও গ্রামে। ছোটবেলা আমাদের বাড়িতে এগুলো দেখতাম। তবে শহরে এসে এগুলোর দেখা পাবো, সেটি কল্পনাও করিনি। একই অনুভূতির কথা জানিয়েছেন তার বন্ধু তাহমিনা।
বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মূল পটভূমি গ্রাম। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গৃহপালিত পশু পালন একটা প্রাচীন রেওয়াজ। সন্ধ্যার আগে মা, বোনদের আরেক দায়িত্ব থাকে সেগুলোকে ঘরে নিয়ে আসা, তাদের বন্দি করে রাখা। সেই উপকরণও প্রদর্শনীতে আছে। রয়েছে মাছধরার সবধরণের ফাঁদ।
মূলত প্রদর্শনীকে ঘিরে বাড়ির আঙিনায় এই ঐতিহ্যের পসরা সাজিয়েছেন শ্রীহট্ট প্রকাশের কর্ণধার জিবলু রহমান। তবে মেলায় আসা মানুষজন বইয়ের চেয়ে বেশি আনন্দ অনুভব করছেন গ্রামীণ উপকরণ দেখে। যেগুলোর অনেকে বাঁশের তৈরি লাঙ্গল, মইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
পরিবার নিয়ে প্রদর্শনী দেখেছেন আলমগীর সুহেল। কথা হলে তিনি জানান, প্রদর্শনীতে ছোট পরিসরে একটা দুলনা রাখা হয়েছে। স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বললেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের বাড়ির সম্মুখে একটি গাছের সাথে রশি বেঁধে দুলনা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার বোন, সেই বোন আজ নেই। দুলনা দেখে সেই বোনের কথা মনে পড়ছে। নতুন প্রজন্মকে গ্রামীণ ঐতিহ্যে উৎসাহিত করতে এই মেলার আয়োজন করা হলেও শহরে বসবাসকারী অনেক প্রবীণও প্রদর্শনী উপভোগ করছেন। মেলায় আসা এমনই এক প্রবীণ শিক্ষক খালিক বলেন, আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে জিবলু রহমানের মতো অনেককে এগিয়ে আসতে হবে।