শহীদ আসাদ দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:১৮:১৪ অপরাহ্ন
শহীদ আসাদ দিবস আজ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যবহ দিন। ১৯৬৯ সালের এই দিনে বাঙালির স্বাধীনতার দাবী জোরালো করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো ছাত্রনেতা আসাদ। শহীদ আসাদ ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের পথিকৃৎ। ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। তাঁর এই আত্মত্যাগে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। পাকিস্তানী স্বৈরশাসক আয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের এই ১১ দফার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ছয় দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের জনতা নেমে আসে রাজপথে। তাই শহীদ আসাদ এ দেশের স্বাধীনতাকামী গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মধ্যে চিরজাগরুক একটি নাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালন করবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।
পুরো নাম মুহাম্মদ আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান। জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ই জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে। তিনি ১৯৬০ সালে শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাৎকালীন জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। আর তখন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নির্দেশনায় কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করার লক্ষে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুর এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। ১৯৬৯ সালে যখন শহীদ হন তখন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এম.এ ডিগ্রি অর্জনের লক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। শহীদ আসাদ ছিলেন ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের পথিকৃৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের তিন শহীদদের একজন। অন্য দু’জন হচ্ছেন- শহীদ রুস্তম এবং শহীদ মতিউর। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে শহীদ আসাদকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ। তাঁর বুকের তাজা রক্ত স্বৈরাচারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলো; যার পথ ধরেই বাঙালিদের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে মুষ্টিবদ্ধ বাহুর শক্তি বেড়ে যায় বহুগুনে। যে ফলশ্রুতি হচ্ছে ৭১ এর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন। আর তাই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে শহীদ আসাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে অনাদিকাল ধরে। সেদিন আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে রাজপথে তাৎক্ষণিক মিছিল করেছিলো ছাত্রজনতা। আর সেই দৃশ্যই ভেসে এসেছে কবির কবিতা- ‘আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।’ তাই আসাদের মৃত্যু নেই, তিনি মিশে আছেন আমাদের গর্বের ধন লাল সবুজের পতাকায়।