দাওয়াতে তাবলীগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:২০:২৩ অপরাহ্ন
আতিকুর রহমান নগরী
মানুষকে সত্যের পথে আহবান করা, সিরাতে মুস্তাকিমের পথ বাতলে দেয়া এবং ওয়ায-নসিহতের কথা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। আল¬াহ পাক ইরশাদ করেন, ‘আপনি হেকমত এবং সুকৌশলে মানুষকে আপনার প্রতিপালকের প্রতি আহবান করুন।’ (নাহল: ১২৫)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল¬াহর দিকে আহবান করে এবং সৎকর্ম করে?’ (হা-মিম সিজদা: ৩৩)
দাওয়াতের কাজের জন্য আল্লাহ পাক যুগে যুগে নবীরাসুল পাঠিয়েছেন। তারা তাদের ক্বওমের ইসলাহ তথা সংশোধনীর জন্য দিবানিশি দাওয়াত কার্যক্রম নিঃস্বার্থভাবে অব্যাহত রেখেছিলেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে যেহেতু আল্লাহ তাআলা নবুওয়াতের (নবি আগমনের) দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন, সতরাং এই দায়িত্ব কালামে পাকের ঘোষণানুযায়ী উম্মতে মুহাম্মদির উপর অর্পিত হয়। খোদাভোলা বান্দাদের, পথহারা মুসলিম জাতির, সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিপথে যাওয়া উম্মতদের সংশোধনীর দায়িত্ব উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে আহলে ইলিম তথা উলামায়ে কিরামদের দায়িত্ব বেশি। কারণ হাদীসে নববীতে জাতির বিবেক উলামায়ে কেরামকেই ওরাসাতুল আম্বিয়া বলে অভিহিত করা হয়েছে। দারুল উলূম দেওনন্দের সূর্যসন্তান মাওলানা শাহ ইলিয়াস রাহ. নবীওয়ালা কাজকে দ্বিতীয়বার জীবন দান মধ্য দিয়ে কুল উম্মাতে মুহাম্মদীকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোই ছিল যার মুখ্য উদ্দেশ্য। আলিম-উলামা নির্বিশেষে সবস্তরের মুসলমানকে এক কাতারে দাঁড় করানোর জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘দাওয়াতে তাবলীগ’ নামে নবীওয়ালা কাজের মিশন। শাহ ইলিয়াস রাহ. নিজে বলেন, দাওয়াতে তাবলীগ নামটি আমি দেইনি। এর নামকরণ পাবলিকরাই করেছেন। আমি যদি এর নাম দিতাম, তবে তাকে ‘তাহরীকে ঈমান’ নামে অভিহিত করতাম। কেউ কেউ তাকে ‘চলতি-ফিরতী মাদরাসা অর্থাৎ ভ্রাম্যমাণ মাদরাসা বলে থাকেন, কিন্তু অনেক ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে ‘এ হল ঈমানের ফেরিওয়ালা’।
ফেরিওয়ালা যেমন কাঁধে বিক্রয়বস্তু বহন করে মানুষের ঘরে নিয়ে যায়, তার উদ্দেশ্য ব্যাবসার সঙ্গে দুনিয়া অর্জন, তাবলীগের সাথীরাও তাসবীহ হাতে জিকির করে চলেন তারা পথের দ্বারে। নক করেন তারা প্রতিটি মানুষের দুয়ারে। কোরআনের ভাষায় এটাকে ‘ব্যবসা’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার পথ দেখিয়ে দেবো যার দ্বারা তোমরা পরকালের যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে বেঁচে যাবে। আর তা হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমাদের জানমাল দিয়ে আল¬াহর রাস্তায় জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। যদি তোমরা জানতে।’ (সূরা: সফ ৯-১০)
সুতরাং দাওয়াতি মিশনে যারাই জড়িত তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একমাত্র নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো। এ জন্যই নিজের খেয়ে পরে তারা দুনিয়াবি স্বার্থ ছাড়াই এ কাজে অতি আনন্দে সময় কাটাচ্ছে।
দাওয়াত কাজের প্রথম টার্গেট হলো নিজের নফল। অর্থাৎ আমি আমাকে সম্বোধন করে আসার সংশোধনীর নিয়তে অপর ভাইকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। ঈমানের কথা বলা। নামাজের গুরুত্ব, জামাতের গুরুত্ব, আল্লাহর সীফাত নিয়ে মুযাফারাহ করো তাতে করে ঈমানে মুজবতী আসে। পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম উম্মাহর ইসলামের একমাত্র পথই হচ্ছে দাওয়াতের মেহনত। জাতিকে হেদায়তের আলোর সন্ধান দিতে দাওয়াতে তাবলীগের বিকল্প নেই। অতএব জাতির বিবেক হে উলামায়ে কেরাম! আপনাদের কাছে আমাদের আবেদনÑ দাওয়াত কাজের পথ ও পন্থা আপনারাই আবিষ্কার হয়েছেন। সুতরাং এখন দায়িত্বের আঞ্জাম আপনাদেরই করতে হবে। কারণ আপনারা ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’।
লেখক : কলামিস্ট