বাড়ছে হুদরোগ-ক্যান্সার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:২৫:১১ অপরাহ্ন

সংক্রামক রোগ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখন অসংক্রামক রোগের ব্যাপারে তেমন একটা বলাবলি হচ্ছে না বললেই চলে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, সংক্রামক রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ কোন অংশেই কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে, হৃদরোগ ও ক্যান্সারে মৃত্যু বেড়ে চলেছে।
জানা যায়, প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে তিনজনের হৃদরোগ ঝুঁকি রয়েছে। প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ক্যান্সারে। দুরারোগ্য ক্যান্সার ও হৃদরোগে আক্রান্ত বাড়ার কারণ হিসেবে ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, খাদ্যে ভেজাল, কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়াকে দায়ি করছেন চিকিৎসকগণ। তাদের মতে, রোগি শনাক্ত বাড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে। এর বাইরেও অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলো আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন-ধূমপান ও তামাক সেবন মুখগহ্বর, পাকস্থলী, ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য সরাসরি দায়ি। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, ভেজাল খাবার গ্রহণ ক্যান্সারের জন্য দায়ি। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্য হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত রয়েছেন দুই লাখ ৭১ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছিলেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক লাখ নয় হাজার ক্যান্সার আক্রান্তের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সক্রিয় ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আরও কয়েক গুণ বেশি হতে পারে। কারণ সারা দেশে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় প্রকৃত সংখ্যা বের করা মুশকিল। ক্যান্সারের মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে হৃদরোগ। বর্তমান বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও দেশে বয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ছিল বেশি। তবে গত কয়েক বছরে তরুণদের মধ্যেও হৃদরোগের প্রবণতা বেড়েছে। দেশে বর্তমানে শতকরা ৫৩ ভাগ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগের কারণে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। উচ্চ রক্তচাপ ও গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের কারণে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি।
সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক খবর হলো, সংক্রামক রোগের ব্যাপারে মানুষ যতো সচেতন, অসংক্রামক রোগের ব্যাপারে ততোটুকু নয়। তবে সচেতনতার মাধ্যমেই এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকা যায়। বিশেষ করে, অভ্যাস পরিবর্তন করে ক্যান্সার ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বাল্যবিয়ে। ধূমপান, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, দুশ্চিন্তা না করা, শরীরের রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করা, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাচলা করা, ব্যায়াম করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রচুর শাকসবজি খাওয়া, নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার মাধ্যমে হৃদরোগ এড়ানো সম্ভব।