হাওরের বুকে সড়ক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ৬:৫৯:২৭ অপরাহ্ন
হাওরের বুকে সড়ক নয় আর। হাওর থাকবে তার বিস্তির্ণ জলরাশি নিয়ে। থাকবে জলজ উদ্ভিদ আর মৎস্য সম্পদ নিয়ে। হাওরের বুক চিরে মাটি আর ইটসুরকির সড়কে চলবেনা আর যানবাহন। হাওরের পানিতে ঢেউ খেলে চলবে কেবল পাল তোলা নৌকা। মাঝির কন্ঠে থাকবে গান ভাটিয়ালি। আসলে এটা আপাতত একটা চিত্রকল্প। তবে বাস্তবেও তো হতে পারে তা অদূর ভবিষ্যতে কোনদিন! সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী।
সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছেন, হাওরে এখন থেকে আর কোন রাস্তা নির্মাণ করা হবে না; সেখানকার ভূমিরূপ ও প্রতিবেশব্যবস্থাকে মাথায় রেখে উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হবে। সরকার পরিবেশ ধ্বংস করে কোন উন্নয়ন প্রকল্প করবে না। আমরা টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাসী।তিনি আরও বলেন, দেশের হাওর ও উপকূলে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সমস্যা বাড়ছে। এই উপলব্ধি বলা যায় নতুন। কারণ এতোদিন কেবলই বলা হয়েছে সড়ক-অবকাঠামোসহ নানা ধরণের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। আর সময়ের প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেই হবে। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। আগপিছ না ভেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে নানা প্রকল্প। নির্মিত হচ্ছে সড়ক মহাসড়ক। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখানে ওখানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নির্মিত হয়েছে রাস্তাঘাট। এমন কি, হাওর ডোবা ভরাট করে কিংবা বনাঞ্চল উজাড় করে নির্মিত হয়েছে সড়ক। এতে সর্বনাশ হচ্ছে পরিবেশের। বিপর্যস্ত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। যার ফলস্বরূপ গত বছর আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে প্রলয়ংকরি বন্যা। তাছাড়া, সড়ক নির্মাণে যথাযথভাবে নির্ধারিত নকশার বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন, হাওরে রাস্তা নির্মাণের সময় ওই রাস্তার অন্তত ৩০ শতাংশ এলাকা কালভার্ট ও সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ফাঁকা রাখার জন্য পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞগণ। কিন্তু বাস্তবে সেটা পাওয়া যায় নি। কোথাও কেথাও দেখা গেছে মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে হাওর বিল জলাশয়ের দখল, দূষণ, ভরাট হয়ে যাওয়া। এই দখল ও দূষণ বন্ধ করাও জরুরি।
হাওর বিল ডোবা প্রাকৃতিক সম্পদ। মিঠাপানির আধার। এগুলো ধংস হোক, এমন কোন কিছু করা যাবেনা। যোগাযোগের জন্য সচল করতে হবে জলপথ। হাওরের বুকে সড়কপথ নয়। প্রয়োজনে হাওরের ওপরে হতে পারে ‘স্বপ্নবিলাসি’ উড়ালপথ। শুধু হাওর নয়, যেকোন জলাধার এবং বনাঞ্চলে আর কোন সড়ক বা অন্য কোন অবকাঠামো নির্মাণ নয়। আমরা চাই এক্ষেত্রে মন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়িত হোক।