সরকারি ভবনের ছাদবাগানে বাহারি সবজির সমাহার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৫৪:০১ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম
ছোট ছোট গাছে বেগুন ঝুলছে। সবুজ পাতার ফাঁকে নীলরঙের বড় আকারের বেগুন নজর কাড়ছে সবার। আছে কুমড়া, লাউ, শিম গাছ। সবজির পাশাপাশি বরিশালী আমড়া, কমলা, মাল্টা ফলও আছে। সেই সবজি এবং ফলের বাগানকে রাঙিয়ে তুলেছে অনেক প্রজাতির ফুল। বড় কোনো ফসলের জমিতে নয়, এ সবই হয়েছে সিলেট ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির একখন্ড ছাদকে ঘিরে।
সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহে ছয়তলা ভবন নিয়ে সরকারি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ভবন। ছয় হাজার স্কয়ার ফুটের ভবনের সেই ছাদ এখন একটি আদর্শ বাগানে পরিণত হয়েছে। যেখানে ফুল, ফল, শাক-সবজির সাথে আছে পাখিদেরও আনাগোনা। সেটি সম্ভব হয়েছে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির উপপরিচালক শাহ নজরুল ইসলামের আন্তরিক প্রচেষ্ঠায়। বর্তমান সেই বাগান থেকে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ থেকে আট কেজি পর্যন্ত সবজি সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর সেই ফলে কোনো ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। বাগান থেকে সংগ্রহ করা সবজিগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। কোনো ধরণের কীটনাশক ব্যবহার না করায় অনেকে আগ্রহ নিয়ে সেগুলো কিনছেন।
শাহ নজরুল ইসলাম ২০২২ সালের আগস্ট মাসে কয়েকটি লাউ দিয়ে বাগানের যাত্রা করেন। কাজের ফাঁকে অবসর পেলেই চলে আসেন আকাশখোলা ছাদবাগানে। নিয়ম করে পরিচর্যা করেন গাছের। মাটি সংগ্রহ করে গাছের উর্বরা শক্তি বাড়ান। নির্দিষ্ট সময়ে গাছে গাছে পানি ঢালছেন, তাদের সেবা-যত্ন করছেন। বর্তমানে সেই বাগানে লাউ ছাড়াও অনেকগুলো বেগুন, শশা, কাচামরিচ, কুমড়া, ছিম, লেবু যেন মানুষের দিকে চেয়ে হাসছে। সাথে আছে পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা, কমলা ও মাল্টার গাছ।
যে গাছগুলো থেকে প্রায় প্রতিদিন অথবা একদিন অন্তর সবজি তুলছেন। এক সকালে সরেজমিন সেই ছাদবাগানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি কাজে ব্যস্ত। প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারাও তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রায় ত্রিশ মিনিটের মধ্যে তিনি সেই ছাদ বাগান থেকে অন্তত আট থেকে দশ কেজি সবজি তুলে এনেছেন।
আলাপকালে শাহ নজরুল ইসলাম জানান, চার মাস আগের বাগান থেকে এভাবে ফল পাবেন, নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে সেটি সম্ভব হয়েছে যত্নের কারণে, গাছের প্রতি আন্তরিকতার বদৌলতে। তিনি জানান, ছাদ বাগানের জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা পাবার ফলে উৎসাহ বেড়ে যায়। এখন গাছগুলোর প্রতি অন্যরকম ভালোবাসার জন্ম রয়েছে। সেই ভালোবাসা তাকে সব সসময় কাছে টানে। তাঁর মতে ‘বৈশ্বিক বাস্তবতায় সবকিছুর দাম বাড়ছে, এমনকি শাক সবজিরও। এভাবে আমরা যদি প্রতিটি বাসাবাড়ি, অফিসের ছাদ পরিত্যক্ত না রেখে, বাগান করি; তাহলে কীটনাশকমুক্ত খাবার যেমন পরিবার পাবে, তেমনি সেগুলো বিক্রি করে ছোট ছোট সঞ্চয় করাও সম্ভব হবে।’ শাকসবজি ও ফলের সাথে বাগানের একটি অংশ শুধু ফুলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যেখানে ফুটেছে নানা প্রজাতির, নানারঙের বাহারি ফুল। যে ফুলগুলো বাগানকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। কোনো ধরণের কীটনাশক না থাকায় মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, প্রজাপতিরও আহারের ব্যবস্থা হয়েছে বাগান ঘিরে।
জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কোনো অতিথি এই প্রতিষ্ঠানে এলে ছাদবাগানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। খোলা আকাশের নিচে একখন্ড বাগান দেখে অতিথিরা অভিভূত হন, বাগান করার আগ্রহ তৈরী হয় অনেকের মধ্যে। আর এটাই স্বার্থকতা হিসেবে নিচ্ছেন শাহ নজরুল ইসলাম।