উন্নয়ন ও জনশক্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন
রঞ্জিত কুমার দে
বাংলাদেশের বড় বিষয় হলো আমাদের বিপুল সংখ্যক যুব শ্রেণি আছে। শ্রমবাজারে যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে যুবকদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে। সারাবিশ্বে দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক সেক্টরে হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক উচ্চ বেতনে কাজ করছে। এভাবে দেশ থেকে প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। মূলত তৈরি পোশাক খাত এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে শতকরা ৯০ ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। এদের শ্রমের মজুরি অন্যান্য দেশের দক্ষ জনশক্তির চেয়ে অনেক কম। আশার কথা হচ্ছে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলায় সরকারি বেসরকারি শত শত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে যেসব শ্রমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়ে আসছে এদের জন্য দেশ-বিদেশে যথাযথ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্য দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় জনশক্তির চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে উপযুক্ত কর্মী প্রশিক্ষণ ও জনবল গড়ে তোলার সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি নির্দিষ্ট দেশের ভাষা সংস্কৃতি ও সিভিক নিয়ম কানুনও প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। শুধু কারিগরি শিক্ষাই নয়, দেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সময়ের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংস্কার বা ঢেলে সাজানোর সুচিন্তিত উদ্যোগ নিতে হবে। ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা চাকরির জন্য বিদেশে যেতে হলে চোরাপথ বা অবৈধ পথ পরিহার করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেতে হবে।
উল্লেখ্য কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে বর্তমানে জীবিকা অর্জনের একটি মাধ্যম। দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে দেশে এখন দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল বিদেশে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আমরা বিপুল পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছি। তাই সবাইকে কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পরিশেষে বলছি যারা বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য নির্বাচিত হবেন তাদের অবশ্যই বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা সংশ্লিষ্ট দেশে কোনোরূপ অনভিপ্রেত পরিস্থিতির শিকার না হন।
জনশক্তি রপ্তানিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সমস্যা-জটিলতায় সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। বেসরকারি রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর অপতৎপরতা রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি রেমিট্যান্স যা প্রবাসীদের মাধ্যমে আসে, সুতরাং রেমিট্যান্স কমে আসার কারণগুলোর প্রতি যেমন যথাযথ দৃষ্টি দিতে হবে তেমন নতুন শ্রমবাজার পেতে আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।