অর্ধকোটি মাদকাসক্ত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৪৮:৪৩ অপরাহ্ন
মাদকের ছোবলে জর্জরিত অর্ধকোটি মানুষ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এর আগ্রাসন। কিন্তু চিকিৎসা অপ্রতুল। বিশেষ করে সরকারি ব্যবস্থাপনা খুবই নাজুক। সারা দেশে মাত্র চারটি সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে শয্যা মাত্র দু’শ। আর বেসরকারি ৩৬৬টি কেন্দ্রে চার হাজার সাত শ’টি শয্যা থাকলেও ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা করাতে পারেন না। ফলে মাদকাসক্তরা ছিনতাই, খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
মাদকাসক্ত কেন হয় মানুষ, কীভাবে হয়, মাদকদ্রব্য কোত্থেকে কীভাবে আসে-এসব নিয়ে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মাদকের উৎস রুদ্ধ করা এবং এর সুচিকিৎসা। দেশে মাদকাসক্তদের সঠিক কোন তথ্য খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতেও নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে অর্ধকোটির বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। ইতোপূর্বে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের এক জরিপ প্রতিবেদনে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬৬ লাখ উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ বলে জানায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন মাদকে কেউ দীর্ঘদিন আসক্ত হলে অস্বাভাবিক আচরণ করে। জানা যায়, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাতে বিভাগীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র করা হয়। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে। কিন্ত এখন পর্যন্ত ১৯টি জেলায় সরকারি-বেসরকারি কোন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। আর বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি পর্যায়ে যেসব নিরাময় কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে, এগুলো চলছে যাচ্ছেতাইভাবে। নানা অভিযোগ এদের বিরুদ্ধে। এব্যাপারে নেই সরকারের তদারকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকাসক্তি নিরাময় হয় না; নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাছাড়া, মাদকাসক্তের চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ। অনেকের চিকিৎসায় এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আশার কথা হচ্ছে, সরকার মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সর্বোপরি, মাদকের বিস্তার ঠেকানো জরুরি। চোরাই পথে এর আমদানি বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে মাদকের অভ্যন্তরিন উৎসস্থল। মাদকাসক্তদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাড়াতে হবে নিরাময় কেন্দ্র। তাছাড়া, ইতোমধ্যে প্রবর্তিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বিধিমালা এবং এলকোহোল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।