পর্যটকদের আরেক গন্তব্য হাকালুকির নাগুয়া বিল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৩৭:২৪ অপরাহ্ন
ইউনুছ চৌধুরী
এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির সীমাহীন বিশালতা, শূন্যকে অনুভব করার নিরবতা, হৃদয় উদাস করা পাখির কূজন, সবুজ মাঠে গরুর পাল নিয়ে নিরুদ্বেগ ঘুরে বেড়ানো, বিলের পানির উপরে বাঁশের মাথায় বক, কামিল বা পানকৌড়ির তপস্যা ভেঙ্গে হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ এমন অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাকালুকিতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। আছে বর্ষায় বিশাল জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা হিজল-করচ বন, আবার শীত মৌসুমে হিজল-করচ-তমালের নিচে গা ছমছমে গুল্মলতা আরোং এর বিশাল ঝোঁপ-জঙ্গল। সিলেটের ৫ উপজেলার মধ্যে বিস্তৃত হাকালুকি হওরের এমন এক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান নাগুয়া বিল পশ্চিম কান্দি। অপার সৌন্দর্যে ভরপুর হাকালুকির আরেক পর্যটন গন্তব্য হতে পারে কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের এই নাগুয়া বিল। ফেঞ্চুগঞ্জ-ভাটেরা-কুলাউড়া সড়কের ভাটেরা জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন ত্রিমুখি থেকে সিংহনাথ গ্রামের রাস্তা হয়ে গাড়ি নেমে যায় হাকালুকি হাওরে। সেখান থেকে পানির নিচ থেকে ভেসে উঠা মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি হাওরের মধ্যে দিয়ে ৫ কিলোমিটার গেলেই নাগুয়া বিল পশ্চিম কান্দি। এছাড়া ভাটেরা বড়গাঁও গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় ওয়াচ টাওয়ারে। সেখান থেকে পাঁয়ে হেঁটে ৫ থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে নাগুয়া বিল। উত্তরে নাগুয়া বিল, হিঙ্গারজুড়, কালাপানি বিলসহ সীমাহীন হাওর ও দক্ষিণে কাংলি বিল, ধানের জমির পর জমি গিয়ে ঠেকেছে গ্রামে। পশ্চিমে কাংলি বিল, ছোট নদী আর দিগন্তজোড়া ধানী জমি এবং পূর্বদিকে বিল আর বোরো ধানের জমি গিয়ে ঠেকেছে দূর গ্রামে। তার মধ্যেই হিজল-করচ-তমাল গাছের নিচে বিশাল লতাগুল্মের আরোং ঝোঁপজঙ্গল, খোলা মাঠ নিয়ে নাগুয়া বিল পশ্চিম কান্দি। ঝোঁপের পাশেই বিশাল মাঠ। প্যান্ডেল বা ক্যাম্প স্থাপন এবং খেলাধুলার অবারিত জায়গা। সকাল ১১টা থেকে দেখা যায়, কৃষকরা ২০/৩০টা করে গরুর পাল নিয়ে হাওরের দিকে ছুটছেন। কৃষকের হাতে বা পিঠে ঝোলানো ব্যাগে থাকে পানির বোতল আর সামান্য খাবার অথবা কিছু কাপড়। ঝোঁপ আর মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে যায় নাম না জানা শান্ত ছোট নদী। আরোং জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু ট্রেইল দিয়ে যেতে গা ছমছম করে অনেকের। স্থানীয়রা জানান, একসময় এসব জঙ্গলে বনবিড়াল, শিয়াল, বুনো শুকর বসবাস করতো। এখন শিয়াল পর্যন্ত এসব থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তবে, ট্রেইলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ছোট পাখির কিচিরমিচির শব্দে বিমোহিত হতে হয়।’ অপরদিকে, হাওরের সামনে গিয়ে বসে নিঃশব্দ শূণ্যতা অনুভূত হয়। বিকেল হওয়ার সাথে সাথে একের পর এক গরুর পাল নিয়ে কৃষক বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। হঠাৎ শব্দ করে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় অতিথি পাখির ঝাঁক। পড়ন্ত সূর্যের সাথে গরুর পাল নিয়ে কৃষকের বাড়ি ফেরা এবং পাখির উড়াউড়ি আর নিঃসীম হাওরের নিরবতার মধ্যে দিয়ে কখন যে শেষ হবে দিন বুঝ যায় না বলে জানান ঘুরতে আসা অতিথিরা।
এ প্রসঙ্গে হাকালুকির কবি খ্যাত সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি কালাম আজাদ বলেন, ‘সমুদ্র দেখার আগে, আমাদের নিকট হাকালুকি ছিল সমুদ্র। হাকালুকির পারে আসলে নিজের অতি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। তিনি হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি হাওর রক্ষায় সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহবান জানান।’ ভাটেরিয়ান সিলেট এর সভাপতি মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান জানান, হাকালুকির সৌন্দর্য্য অপরুপ। এ সৌন্দর্য্য দেখতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। হাকালুকির নাগুয়া বিলে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এমনটা করা জরুরী বলে তার মন্তব্য।