জকিগঞ্জ এসোসিয়েশন ইউকে’র সংবাদ সম্মেলন
জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চল ঘোষণা না করলে আন্দোলন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৩৬:২২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২১ নভেম্বর দেশের মধ্যে প্রথম শত্রুমুক্ত হয় সিলেটের জকিগঞ্জ। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছরেও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি পায়নি। জকিগঞ্জবাসীর এ দাবি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আশ^াস দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এ বছরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে প্রয়োজনে দেশ-বিদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
গতকাল রোববার নগরীর একটি হোটেলের হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকিগঞ্জ এসোসিয়েশন ইউকে এ দাবি তোলে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন-এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ উপজেলা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে হানাদার মুক্ত হয়। লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল জকিগঞ্জে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর পার হলেও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি পায়নি।’
‘দাবিটি বাস্তবায়নে নানা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন জকিগঞ্জবাসী। প্রতিবছর ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জসহ আমরা প্রবাসীরা নানাভাবে দিবসটি পালন করে থাকি।’
‘গত বছরের ২০ নভেম্বর লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে দিবসটি বাস্তবায়নের দাবিতে র্যালি ও পরবর্তীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জকিগঞ্জ ছাড়াও কমিউনিটির কয়েকটি সামাজিক সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করে। একই দিনে জকিগঞ্জেও নানা কর্মসূচি পালিত হয়।’
জকিগঞ্জকে মুক্তাঞ্চল স্বীকৃতির দাবিতে বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবিনামা প্রেরণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর আশ^াস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আমরা লন্ডন থেকে দেশে এসে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি।’
গত ২৬ জানুয়ারি আবারও মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানান আবুল হোসেন। এবারও মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিজি সিলেটের কৃতি সন্তান জহুরুল ইসলামকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সব তথ্য যাচাই বাছাই করে জকিগঞ্জের মানুষের প্রাণের দাবিটি বাস্তবায়নে কাজ করবে। তবে, এ বছরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে দেশে ও বিদেশে জকিগঞ্জের আপামর মানুষকে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জকিগঞ্জ এসোসিয়েশন ইউকের কিছু কার্যক্রম তুলে ধরেন তিনি। করোনা মহামারি ও বন্যার সময় এসোসিয়েশনের উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রম তুলে ধরেন। করোনার সময় জকিগঞ্জের মানুষের জন্য ২৬ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। গত বছর বন্যার সময় জকিগঞ্জ ছাড়াও সুনামগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বন্যা পরবর্তীতে জকিগঞ্জে শতাধিক ঘর মেরামত করে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছে এসোসিয়েশন। এছাড়া গত বছর জকিগঞ্জের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থীকে নগদ অর্থ সম্মাননা ও সার্টিফিকেট প্রদান, জকিগঞ্জের কয়েকটি কওমি ও সরকারি মাদ্রাসা এবং স্কুলে কম্পিউটার প্রদান এবং নারীদের কর্মমুখী করে তুলতে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী, সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম, সিলেটস্থ জকিগঞ্জ পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুনেদ আহমদ চৌধুরী।