দেশি জাতের ধান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৪৪:১৬ অপরাহ্ন
![দেশি জাতের ধান দেশি জাতের ধান](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2022/06/editoral.jpg)
নবান্নের উৎসব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তার রেশ এখনও ফুরিয়ে যায় নি বাংলার ঘরে ঘরে। কিন্তু চিরায়ত বাংলার সেই নবান্ন উৎসবের আমেজ কি পাওয়া যায় এখন? কারণ এখন গৃহস্তের গোলায় যে ধান উঠছে, তার বেশিরভাগই আমাদের দেশীয় জাতের ধান নয়। যার সুগন্ধে অকৃষ্ট হতে পারছেনা মানুষ। সময়ের পরিক্রমায় উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ হচ্ছে বেশি। আর সেগুলোতেই সন্তুষ্ট কৃষকেরা। আর বাস্তবতা হচ্ছে, দেশি জাতের অনেক ধানই এখন বিলুপ্ত।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা যায়, অন্তত ১০ হাজার জাতের দেশীয় ধান এখন আর পাওয়া যায় না। তাদের মতে, গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রায় ১৮ হাজার জাতের দেশীয় ধানের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এখন দেশীয় ধানের মাত্র আট হাজার ছয় শ’টি জাত সংরক্ষিত আছে। এগুলো থেকেই নিত্য নতুন জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। তবে এখন দেশের পাহাড় থেকে সমতল অঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো ধানের সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজারের বেশি জাতের আবাদ হয়। বছর কয়েক আগে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপ থেকে জানা যায় বাংলাদেশে কমবেশি আট হাজার জাতের ধান আছে। তবে এসব ধানের মধ্যে সরাসরি দেশীয় জাতের ধান এখন নেই বললেই চলে। দেশীয় সুস্বাদু ধানের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার কারণও আছে। প্রথমত দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং এ কারণে খাদ্য চাহিদাও বাড়ছে। পাশাপাশি চাষযোগ্য জমির পরিমাণ আশংকাজনকেভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে অল্প জমিতে বেশি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। অথচ দেশীয় জাতের ধানের ফলন কম। এই প্রেক্ষাপটে ধানের উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে অল্প সময়ে বেশি ফলন দেয়, এমন জাতের ধানকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে কারণে দেশে হাইব্রিড এবং উচ্চফলনশীল অনেক ধরণের আধুনিক জাতের ধান চাষ হচ্ছে। আর কৃষকেরাও ব্যাপকভাবে এইসব ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, অতীতে দেশি জাতের ধান চাষ করতে কোন বীজ বাজার থেকে কিনতে হতো না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলত। যা দিয়ে পরের বছর ধান চাষ করা যেতো। জমিতে দিতে হতো না কোন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। বন্যার সময় পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচ থেকেও এসব ধানের মাথা দেখা যেতো। হারিয়ে যাওয়া ধান সংরক্ষণে সরকারি কোন উদ্যোগ নেই বললেই চলে। উচ্চফলনশীল ধানের পাশাপাশি চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য দেশীয় জাতের ধানও সংরক্ষণ করতে হবে।