আদালতে স্বীকারোক্তি ॥ কাটা রশির সূত্র ধরে রহস্য উদঘাটন করলো পুলিশ
জমি-জমা নিয়ে বিরোধে দুবাই ফেরত ভাইকে খুন করে দুই সহোদর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৩, ৭:৪১:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির ভাট-বাটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে দুবাই ফেরত সাজ্জাদ আলীকে (৩৫) খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দেয় তার দুই সহোদর। মামলাটির তদন্তে নেমে পুলিশ একটি কাটা রশির সূত্র ধরে ‘ক্লুলেস’ ওই মামলাটির রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, মামলার বাদীই ভাই হন্তারক।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার দুপুরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) মাসুদ রানা এবং উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সুহেল রেজা পিপিএম-এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পুলিশ জানায়, এসএমপি’র জালালাবাদ থানার বসন্তরাগাঁও’র মৃত ছোয়াব আলীর পুত্র নিহত সাজ্জাদ আলী উত্তরাধিকার সূত্রেপ্রাপ্ত জায়গা-জমি ভাগ-বাটোয়ারা করার জন্য তার ভাইদের তাগিদ দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এর জেরেই হত্যা করা হয় তাকে। ঘটনা আড়াল করার জন্য নিহতের সহোদর জাহাঙ্গীর আলী নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ভাই হত্যার দায় স্বীকার করে গত মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর আলী ও তার অপর সহোদর সিরাজ আলী।
উপশহরস্থ এসএমপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দির টেকনিক্যাল রোডের একটি অটো রাইস মিলের সামনে নদীর তীর থেকে বস্তাবন্দি একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, লাশটি প্রবাসফেরত সাজ্জাদ আলীর। নদী থেকে লাশ উদ্ধারের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধানে থানা ও ওসমানী হাসপাতালে যান তার ভাই জাহাঙ্গীর আলী। তিনি লাশ শনাক্তের পাশাপাশি অজ্ঞাতদের আসামী করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সুরমা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে লক্ষীপুর সদর থানার রাজাপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর পুত্র শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তার কাছ থেকে কোন তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পুলিশ নিহত সাজ্জাদ আলীর বসতঘরে গিয়ে তার কোনো কাপড় চোপড় না পেয়ে বাড়ির ছাদের উপরে কাপড় শুকানোর রশির কিছু অংশ সংগ্রহ করে। নিহত সাজ্জাদ আলীর হাত-পা বাঁধার রশির সাথে এ রশির মিল পায় পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হত্যা মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলীকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর সাজ্জাদ আলীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা বসন্তরাগাঁও এলাকার কবরস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রশিও উদ্ধারের পাশাপাশি সহযোগী অপর ভাই সিরাজ আলীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় বর্তমানে জাহাঙ্গীর ও সিরাজ ছাড়াও শাহজাহান গ্রেফতার রয়েছে।