৫২ বছর পর সোনাই নদীতে সেতু হচ্ছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মার্চ ২০২৩, ৭:১৪:৩১ অপরাহ্ন
#কোম্পানীগঞ্জ ও ছাতকের পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে
# আজ ভিত্তিস্থাপন করবেন এমপি মানিক
ফায়যুর রাহমান:
একটি সেতুর জন্য দীর্ঘ বায়ান্ন বছর অপেক্ষা করেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারার সীমান্তবর্তী এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষায় নাও ও শুকনো মৌসুমে বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হলেও ভোগান্তির সীমা ছিল না তিন উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নবাসীর। অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। ছনবাড়ি বাজার সংলগ্ন ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সংযোগস্থল সোনাই নদীতে নির্মাণ হচ্ছে পাকা সেতু। ইতোমধ্যে পাইলিংসহ সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির ভিত্তিস্থাপন করবেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হবে। ৬০ দশমিক ৬ মিটার (১৯৭ ফুট) দীর্ঘ ও সাত মিটার (২১ ফুট) প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৫ টাকা। কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএস মমিনুল হক এর নির্মাতা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ৩১ জুলাই প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ছাতক-এর উপজেলা প্রকৌশলী আফছর আহমদ সিলেটের ডাককে জানান, কিছু জটিলতার কারণে হয়তো প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে বিলম্ব হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেতুর দুই প্রান্তের পাইলিং শেষ হলেও মধ্যখানের পাইলিং নিয়ে তারা জটিলতায় আছেন। পাইলিং ৪০মিটার যাবার কথা থাকলেও নিচে পাথরের কারণে ৩৬মিটারে গিয়ে সেটি আটকে আছে। অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ওই এলাকার নদীতে আগে-ভাগে পাহাড়ি পানি নেমে আসে। যে কারণে অনেক সময় এক মৌসুমে কাজ শেষ করা যায় না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সেতু এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্প ম্যানেজার কামাল জানান, চারটি কলাম ও তিনটি স্প্যানে ৬০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে প্রতিদিন ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। পাইলিংয়ের দায়িত্বে থাকা আনোয়ারুল হক উজ্জল জানান, বর্তমানে নদীটিতে সেচ প্রকল্প রাবার ড্যামের পানি ফুলে থাকায় বালুর বাঁধ দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের (ছাতক-দোয়ারা) সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়ন, দোয়ারাবাজারের নরসিংপুর ও বাংলা বাজার ইউনিয়ন এবং কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ও পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ সুফল পাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সেতুটির কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারার সাথে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে। অবহেলিত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দীর্ঘ প্রত্যাশিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে, দুর্ভোগ ঘুচবে।
তিনি জানান, বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলি মণিপুরি রাসলীলা অনুষ্ঠানে ছনবাড়ি বাজার এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণের। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। ইতোপূর্বে সোনাই নদীতে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি চাষাবাদের আওতায় এসে এই অঞ্চলের কৃষিতে যেমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, সেতুটি নির্মাণের ফলেও তেমনি এলাকাবাসী সুফল পাবেন।
কোম্পানীগঞ্জের ছনবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রফিক জানান, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা নদীতে বাঁশ-কাঠের সাঁকো তৈরির আগে সীমাহীন কষ্ট করে স্কুলে আসত। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে ছাতকের নিজগাও, রাসনগর, বনগাও, পুরান নোয়াকোট, ধনীটিলা, রতনপুর, বাগান ও গাংপার নোয়াকোট থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারত না। সোনাই নদীর সেতুটি তাদের দুর্ভোগ লাঘব করে স্বাচ্ছ্যন্দে স্কুলে আসার পথ সুগম করবে।
ছাতকের ছনবাড়ি বাজার সংলগ্ন জামেয়া কুরআনিয়া নোয়াকোট মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমর উদ্দিন বলেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে কোম্পানীগঞ্জের ছনবাড়ি, জালিয়ারপার, চিকাডহর, শারপিন টিলা, বাহাদুরপুর, নভাগী ও নতুন জালিয়ারপার গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা আগে অনেক কষ্টে মাদরাসায় আসত। বর্তমানে বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হলেও পাকা সেতু নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ হবে।
গাংপার নোয়াকোট গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী নুরুজ্জামান জামাল বলেন, সোনাই নদীতে সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলে যোগাযোগ সহজ ও পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী হবে। ছাতক-দোয়ারার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সহজেই কৃষিপণ্য সিলেটে বাজারজাত করা যাবে। সেতু নির্মাণের জন্য তিনি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মুহিবুর রহমান এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।