জৈন্তাপুরে ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী হত্যা মামলার রায়
একজনের ফাঁসি, ৩ আসামীর যাবজ্জীবন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মার্চ ২০২৩, ৮:১০:১১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের জৈন্তাপুরে ব্যবসায়ী ইউনুস আলী হত্যা মামলায় কয়েস আহমদ (২৮) নামের এক আসামীর মৃত্যুদন্ড হয়েছে। একই মামলায় তিনি আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অপর ৩ আসামীর বেকসুর খালাস হয়েছে। সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো: শাহাদৎ হোসেন প্রামাণিক গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার এ রায় দেন। আদালতের স্পেশাল পিপি এডভোকেট সওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত কয়েছ আহমদ (২৮) সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ফতেহপুর ইউনিয়নের উপর শ্যামপুর গ্রামের কুতুব আলীর পুত্র। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে- জৈন্তাপুর থানার হরিপুর গ্রামের ফয়জুর করিমের পুত্র রাসেল আহমদ (৩০), একই এলাকার লাল মিয়ার পুত্র জুয়েল আহমদ (২৮) ও একই থানার উপর শ্যামপুর গ্রামের মাহমুদ আলী ওরফে হরু মিয়ার পুত্র মো: বিলাল আহমদ ওরফে বেলাল (২২)।
খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন-যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাসেল আহমদের পিতা মো: ফয়জুল করিম ওরফে ফয়জুর করিম (৫৮), গোয়াইনঘাট থানার ফতেহপুর ৫ম খন্ডের ইউনুছ আলীর পুত্র দেলোয়ার আহমদ মেম্বার (৪০) ও জৈন্তাপুর থানার হরিপুর গ্রামের মৃত হাজী সামছুল হকের পুত্র মো: এমদাদ উল্লাহ ওরফে ইমদাদ উল্লাহ (৩৫)।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, জৈন্তাপুর থানার হরিপুর গ্রামের হাজী মো: ইব্রাহিম আলী পুত্র ইউনুছ আলী (৩২) হরিপুর বাজারে আনন্দ মিষ্টি এন্ড রেস্টুরেন্ট নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনুছ আলী তার দোকান বন্ধ করে মোটরসাইকেল যোগে আনন্দ মৎস্য খামার দেখার জন্য যান। বাড়ি ফিরতে না দেখে তার পরিবারের লোকজন তার সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মৎস্য খামারে যাচ্ছেন বলে তাদেরকে জানান। ওই রাতে তিনি আর বাড়ি ফিরতে না দেখে ইউনুছ আলীর পিতা হাজী মো: ইব্রাহিম আলী পরদিন ৩০ ডিসেম্বর জৈন্তাপুর থানায় ১৪৩৫ নং একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার থেকে রাত ৩ টার মধ্যে যেকোন সময় আসামী রাসেল আহমদের সাথে টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে ইউনুছ আলীকে আসামীরা কৌশল করে জৈন্তাপুর থানার উপর শ্যামপুর গ্রামস্থ মৃত হাজী বরকত উল্লাহর বসত বাড়ির পিছনের টিলার মধ্যস্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আসামীরা ইউনুছ আলীর হাত-পা বেঁধে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ওই টিলায় গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা তার বহনকৃত মোটর সাইকেলটি পুড়িয়ে ফেলে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রথমে রাসেল আহমদকে গ্রেফতার করে। পরে তার তথ্য মতে, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ইউনুছ আলীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে । চিকনাগুল খাঁ চা বাগানের ভিতর থেকে পুলিশ ইউনুছের বহনকৃত পুড়িয়ে ফেলা মোটরসাইকেলটি উদ্ধার ও জব্দ করে। এ ঘটনায় নিহত ইউনুছ আলীর পিতা হাজী মো: ইব্রাহিম আলী বাদী হয়ে জৈন্তাপুর থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১ (০১-০১-২০১৫)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর সিলেট পিবিআইর পরিদর্শক (নি:) ৭ আসামীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট (১৭৪ নং-অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে এ মামলার বিচার কার্য শুরু করেন আদালত। দীর্ঘ শুনানী ও ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী কয়েছ আহমদকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২/৩৭৯/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও পেনাল কোডের ৩৭৯ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
অপর আসামী রাসেল আহমদ ও জুয়েল আহমদকে পেনাল কোড এর ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ড এবং পেনাল কোডের ২০১ ধারায় ৩ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেওয়া হয় এবং আসামী মো: বিলাল আহমদ উরফে বেলালকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেন আদালত।
অপর আসামী ফয়জুর করিম, দেলোয়ার মেম্বার এবং এমদাদদের দোষ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।
রায়ে আদালত হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে আসামি কয়েছ আহমদের গলায় রশি লাগিয়ে তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কয়েছ আহমদ রায়ের বিরুদ্ধে ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি এডভোকেট সওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল এবং আসামীপক্ষে এডভোকেট নূরুল হক মামলাটি পরিচালনা করেন।