দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মার্চ ২০২৩, ৯:০৭:৫৭ অপরাহ্ন
জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস আজ। দুর্যোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি তথা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষে আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দেশের একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই দুর্যোগ অতীতে সংঘটিত হয়েছে, আগামীতেও সংঘটিত হবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
দুর্যোগ মানবজাতির জন্য এক অনাহুত বিপর্যয়। কখনও আমরা নিজেরাই দায়ী এই বিপর্যয়ের জন্য। আবার প্রকৃতি কখনও রুদ্রমূর্তি ধারণ করে নিয়ে আসে দুর্যোগ। আর দুর্যোগ মানে দুর্ভোগ। দুর্যোগ মানে ক্ষয়ক্ষতি মানুষের, সম্পদের। যে দুর্যোগের ওপর মানুষের হাত নেই, সেটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বলা চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় সারা বছরই। আর দেশের ১৬ কোটি মানুষই এর শিকার। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তিন লাখ এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে শুধু বাংলাদেশে বেড়েছে এমন নয়, সারা বিশ্বেই বেড়ে চলেছে দুর্যোগের মাত্রা। এর কারণও আছে। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ছে তাপমাত্রা। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যেতে পারে সমদ্রগর্ভে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র এক মিটার উচ্চতায় রয়েছে। তার মানে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দু’তিন মিটার বাড়লেই এই উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ। আর এই দুর্যোগের শংকা যে আগামীতে আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে, সেটা বলাই বাহুল্য। এর জন্য আমাদের ভাবতে হবে এখনই। সত্যি বলতে কি, সব ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্যই আমাদের অবিবেচক আচরণই দায়ী। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে মানুষ নানাভাবে। যেমন-বৃক্ষ সম্পদ ধ্বংস, পাহাড় কাটা, বায়ু দূষণের মতো পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে মানুষ লিপ্ত রয়েছে। আর এসবেরই বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সুদূর অতীত থেকে এই দেশের মানুষ বেঁচে আছে নানামুখী দুর্যোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বলা যায়, অনাদিকাল ধরেই তাদের সঙ্গী রয়েছে এই দুর্যোগ। ফলে এটা বলা যায় যে, দুর্যোগ মোকাবেলা করার মনোবল গড়ে ওঠেছে তাদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই। দিন দিন দুর্যোগের ভয়াবহতা বাড়ছে। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা। আমাদের সম্পদ সীমিত। তবুও সীমিত সম্পদ, জনবল আর সেই সঙ্গে প্রবল মনোবল নিয়ে দুর্যোগের রিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এদেশের মানুষ অতীত থেকেই। এখনও তারা ঐক্যবদ্ধ। তবে পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও সংকটাপন্ন হতে পারে, এই আশঙ্কাকে মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে। সাজাতে হবে দুর্যোগ মোকাবেলার পরিকল্পনা। সরকারের সময়োপযোগি উদ্যোগ এবং সেই সঙ্গে মানুষের সচেতনতা যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম এটা বার বার প্রমাণিত হয়েছে।
দুর্যোগ প্রতিহত করা যায় না, এটা ঠিক। তবে যথাসময়ে যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে যে কোনো দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। সম্ভাব্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন স্তরের মানুষদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা যায়। মূলতঃ ত্বরিত জানমাল রক্ষার কলাকৌশল শেখানোই হবে এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণ দিতে হবে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষদের। সবচেয়ে বড় কথা, দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক মানসিক প্রস্তুতি খাকতে হবে। তাছাড়া, দুর্যোগের পূর্বাভাস যথাসময়ে ও যথাসম্ভব সঠিকভাবে মানুষকে অবহিত করার কাজটিও করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদানে আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোকে আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে দুর্যোগ মোকাবেলায় যতোই প্রস্তুতি নেয়া হোক, কোনো কাজে আসবে না।