বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আব্দুল খালিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৩, ৬:৪৬:২৯ অপরাহ্ন
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালিক ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল সিলেটের কাজলশাহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম নবু মিয়া এবং মাতা রমিজা বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। এই দম্পতি পাঁচজন সন্তানের গর্বিত জনক- জননী। সন্তানেরা হলেন : প্রথম সন্তানÑ হুসনেরা বেগম, দ্বিতীয় সন্তানÑ ইমরান আহমদ, তৃতীয় সন্তানÑ মাহমুদা বেগম, চতুর্থ সন্তানÑ সাব্বিরা বেগম রেনু এবং পঞ্চমজন হলেনÑ কামরান আহমদ।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে মো. আব্দুল খালিকের ভূমিকা ছিল গর্ব করার মতো। নিম্নে তা আলোকপাত করা হলোÑ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দবাঙালি জাতির জন্য স্মরণীয়। তেমনি তাঁর জীবনেরও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ স্মরণীয়। সেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। সেই ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে পাকিস্তান নামক দেশটির জন্ম হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ পূর্বপাকিস্তানিয় ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে আসছিল। সেই অত্যাচার থেকে বাঙালি জাতি অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানিদের রক্ষ করার জন্য বঙ্গবন্ধু অনেক সংগ্রাম করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অনেক আন্দোলন করেছিল বাঙালিরা। অবশেষে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনগণের উদ্দেশে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেনÑ
“এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম, আমার স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
সেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মো. আব্দুল খালিক ১৮-১৯ বছরের যুবক। তখন তিনি ঊ.চ.জ রাজশাহী সেক্টর-৫ এ ল্যান্স নায়েক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল রকিব এবং কর্মস্থল ছিল সেভেন উইংস হেড কোয়ার্টার নওগাঁ। উইসং কমান্ডার ছিলেন মেজর নজমুল, যার বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম এবং আরও ছিলেন ক্যাপ্টেন টু আইসি আরব আলী। যার বাড়ি ছিল কুমিল্লার দেবিদ্বার এবং ক্যাপ্টেন গিয়াস যার বাড়ি ছিল কুমিল্লা। তিনি তাদের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে ঢাকা পিলখানা, রাজার বাগ পুলিশ লাইন্স, ই.পি.আর. সদর দপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক সেনারা আক্রমণ করে। এ কাল রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর ভিত্তিতে ২৫ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। এদিকে ই.পি.আর ক্যাম্পে রাজশাহীতে নির্দেশ আসে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকদের কাছ থেকে অস্ত্রাগার বাঙালিদের দখলে আনতে হবে। তখন তিনি ৫০/৬০ জন সঙ্গী সাথিসহ পাকিস্তানিদের বন্দি করে রাজশাহী শহরে গুলশান হোটেলের মোড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং সেই যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনারা কেউ কেউ পালিয়ে যায় এবং স্থানটি হানাদার মুক্ত হয়। এরপর তাদেরকে রংপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট নওদাপাড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁরা এক বিরাট হাওরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অপারেশন ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ হাওরের একপ্রান্তে ছিলেন তাঁরা ও অপরপ্রান্তে ছিল পাকসেনারা। সেখানে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। অবশেষে এই স্থানটিও তাদের দখলে চলে আসে।
এভাবে রাজশাহী, রংপুর যশোর, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা যুদ্ধ করেন। দীর্ঘ সাত মাস জীবন বাজি রেখে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যুদ্ধ করেন। সৌভাগ্যক্রমে সিলেটের তামাবিল এলাকায় এসেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে দায়িত্বে থাকা মীর শওকত আলীর নির্দেশে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেন। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দেশ শত্রু মুক্ত হয়। দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ হয়। মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরে তিনি গর্ববোধ করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নীচু করে আত্মসমর্পন করেছিল। বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। সেই দিন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগে দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।