একুশে সম্মাননা ও সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের অনুভূতি
গুণীজন সৃষ্টিতে দানবীর রাগীব আলীর এ প্রয়াস দূরদর্শী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৩, ৭:১০:৩৭ অপরাহ্ন
রাগীব আলীকে নিয়ে ‘গরিবের বন্ধু’ চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা হেলাল খানের
স্টাফ রিপোর্টার : বর্ণাঢ্য আয়োজনে গতকাল শনিবার ২৫ গুণীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ‘রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন’র একুশে সম্মাননা ও সাহিত্য পুরস্কার’। পদকপ্রাপ্তরা সিলেটসহ গোটা বাংলাদেশে সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে রেখেছেন অনবদ্য অবদান। তাঁদের সুকীর্তির স্বীকৃতি প্রদান এবং এ কাজে আরো উৎসাহ এবং অনুপ্রাণিত করতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী ও শিল্প সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, দানবীর ড. রাগীব আলী এসব গুণীর হাতে তুলে দেন সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ, চেক, ব্যাগ এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী।
এ উপলক্ষে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার সংলগ্ন বিশাল সামিয়ানার নিচে জড়ো হয়েছিলেন নানা শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষ। করোনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে উচ্ছ্বসিত ছিলেন সবাই। রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার ও রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন একুশে সম্মাননা প্রাপ্তরাও ছিলেন আবেগে আপ্লুত। তারা অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এমন মহতি কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও সমাজসেবামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মানবসেবায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের এই আয়োজন সিলেটবাসীর জন্য বিরল ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তারা। তারা বলেন, এ সম্মাননা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজে গুণীজন সৃষ্টিতে দানবীর ড. রাগীব আলীর এ দূরদর্শী প্রয়াস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করেন।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন একুশে সম্মাননাপ্রাপ্ত মাওলানা মুফতি মো. মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি বলেন, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কল্যাণকর কাজের প্রতি শুকরিয়া জানাতে হয়। দানবীর ড. রাগীব আলী ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত মানবকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন মহৎ কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কিয়ামতের আগ পর্যন্ত এসকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক উল্লেখ করে দানবীর ড. রাগীব আলীর সুস্থতা ও নেক হায়াত কামনা করেন তিনি।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে একুশে সম্মাননাপ্রাপ্ত স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ বলেন, সমাজে গুণীজনের কদর গুণীজনরাই বুঝতে পারেন। দানবীর ড. রাগীব আলীর মহানুভবতার আরেক সহযাত্রী ছিলেন তাঁর প্রয়াত সহধর্মিণী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। তিনি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেন।
কবিতায় একুশে সম্মাননাপ্রাপ্ত এখলাসুর রহমান বলেন, এ সম্মাননায় আমি আনন্দিত ও গৌরবান্বিত। দেশ ও বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলার আহবান জানান তিনি।
চিত্রনায়ক হেলাল খান অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার মাসে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন একুশে সম্মাননা পেয়ে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাব সে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না’। তিনি দানবীর ড. রাগীব আলীকে নিয়ে ‘গরিবের বন্ধু’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালিক বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অসংখ্য কাজ করেছে। সরকারের পরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করা ব্যক্তি হিসেবে দানবীর ড. রাগীব আলীকে ‘সেকেন্ডম্যান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
একুশে সম্মাননাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল হক বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী লন্ডনের মতো জায়গায় সোনার হরিণ ছেড়ে নাড়ির টানে দেশে চলে আসেন। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও একসময় মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন উপেক্ষিত। তখনও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করতে তিনি পিছপা হননি। তার প্রদানকৃত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সিলেটে মুক্তিযোদ্ধা বহুমুখী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন হয়। পরবর্তীতে তিনি ওই ট্রাস্টে আরো ৫ লাখ টাকা দান করেন। এছাড়া, বিভিন্ন উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনির্মাণসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে দানবীর রাগীব আলী ও রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রশংসার দাবিদার। দানবীর ড. রাগীব আলী মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোবাসেন।
অনুষ্ঠানে গবেষণায় রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ফোরকান আহমদ বলেন, আমি অনেক গুণী ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি। কিন্তু, তার মতো একজনও গুণী মানুষের সন্ধান পাইনি। তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করেন। তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি খুবই খুশি বলে উল্লেখ করেন। তার সম্মাননা তিনি মহীয়সী নারী মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর প্রতি উৎসর্গ করেন।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রফেসর ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নাম ছড়াতে সময় লাগে না, কিন্তÍু সুনাম ছড়াতে সময়ের প্রয়োজন হয়। দানবীর ড. রাগীব আলী ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন তিলে তিলে সুনামের ভাগীদার হয়েছে। কর্মজীবনে অনেক প্রাপ্তির চেয়ে আজকের এই প্রাপ্তি আলাদা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ডা. বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, পুরস্কার ও সম্মাননা ফোকাস বাড়িয়ে দেয়। এতে কাজের দায় আরো বৃদ্ধি করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কথা সাহিত্যে রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. নিলুফা আক্তার বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলীর মতো সমাজে অনেক অর্থবিত্তের মালিক থাকলেও সমাজ উন্নয়নে তাঁর মতো সম্পৃক্ততা খুব কম মানুষের আছে। তিনি দানবীর ড. রাগীব আলীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সেই সাথে তার সহধর্মিণী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর মাগফেরাত কামনা করেন।