বিশ্ব-গ্লকোমা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৩, ৭:৪৭:১৭ অপরাহ্ন

ডা. রুহুল আমিন হাসান
আজ ১২ মার্চ, ২০২৩ বিশ্ব-গ্লকোমা দিবস, সারা বিশ্বজুড়ে ২০১০ সাল থেকে বিশ্ব-গ্লকোমা সপ্তাহের অংশ হিসাবে এই দিনকে মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। সাধারণত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই সচেতনতা সপ্তাহের প্রোগ্রাম; ডাব্লিউ এইচ ও’ এর নির্দেশনায় এই সংযোজন।
গ্লকোমা হচ্ছে চোখের মারাত্মক একটা অসুখ, অন্ধত্বেই এর শেষ পরিণতি। গ্লকোমার কারণ আমরা আজও জানিনা। যথা সময়ে অর্থাৎ শুরুতেই এই অসুখ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। গ্লকোমায় আক্রান্ত হলে চোখের নার্ভ (অপটিক নার্ভ) ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়; মস্তিষ্কে আর দৃষ্টির সিগন্যাল পৌঁছাতে পারে না। কারও কারও আঁখি গোলকের প্রেশার বেড়ে গিয়ে এর শুরু, তবে প্রেশার বেড়ে যাওয়া ছাড়াও গ্লকোমা হতে পারে ।
গ্লকোমা হচ্ছে এমন একটা অসুখ যার প্রতাপ অদমনীয়, অপরিবর্তনীয় কিন্তু অসুখের গতি থামিয়ে দেয়া সম্ভব যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে। মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা বেশীরভাগ সময় জানতে বা বুঝতেই পারি না যে আমাদের গ্লকোমা হয়েছে। একটা নিরব ঘাতকের মতো চুপিসারে ক্ষতি করেই চলে; ইংরেজিতে বলা হয় (ঝরষবহঃ ঞযরবভ ড়ভ ঝরমযঃ) দৃষ্টি শক্তির ছিঁচকে চোর।
গ্লকোমায় এই সময়ে পৃথিবীতে (২০২০) প্রায় ৭৬ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত এবং ২০ বৎসর পরে (২০৪০) যা হবে প্রায় ১১২ মিলিয়ন। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত ও এর শতকরা ৯০ জন জানেই না যে তার গ্লকোমা হয়েছে। একই কারণে ভারতে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ অন্ধ। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের পরিসংখ্যান বলছে, চল্লিশ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের মধ্যে ২-৩% জনের গ্লকোমা আছে। আপনজনের গ্লকোমা হয়ে থাকলে তার পরবর্তী জেনারেশনের মধ্যে আক্রান্তের সম্ভাবনা প্রায় ১০ গুন বেশি।
গ্লকোমার আক্রান্তের বয়সভেদে গ্লকোমাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে বলা হয়। জন্মগত হলে বলা হয় কনজেনাইটাল, পরবর্তীতে (৩-১০ বৎসর ) ডেভেলাপমেন্টাল, এরপর (১০-৪০ বৎসর) জুভেনাইল।
গ্লকোমাকে আবার অন্যভাবে ভাগ করা যায়; বন্ধ-কোণ (closed angle) ও খোলা-কোণ (open angle)। কখনো কখনো প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা , চক্ষু লাল হয়ে যাওয়া, চোখে রংধেনু দেখার মধ্য দিয়েও এর শুরু হতে পারে। এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দৃষ্টির সংকোচন; অন্ধত্বে এর শেষ পরিণতি। যথাসময়ে রোগ নির্ণয় করা হলে আজীবন ঔষধ ব্যবহার করে এর প্রকোপকে থামিয়ে দেয়া যায়। সার্জারি ও লেজারের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়।
বিশ্ব-গ্লকোমা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে (The World is Bright, Save Your Sight.) ‘দেখতে হলে সৃষ্টি , বাঁচাও তোমার দৃষ্টি’ অথবা ‘ঠিক থাকিলে দৃষ্টি, দেখতে পাবে সৃষ্টি’। বিশ্ব-স্রষ্টার অপূর্ব সুন্দর এই পৃথিবী; এর রূপ-সৌন্দর্য দেখতে পারি আমাদের দৃষ্টি শক্তি দিয়ে। অন্ধত্বের বোঝা নিয়ে কিছুই দেখা যাবে না। তাই আমাদের চোখকে রাখতে হবে সুস্থ ও নিরাপদ। সরাসরি নাহলেও অন্য যে-সব রোগে চক্ষুর উপর চাপ পরে, যেমন ডায়াবেটিস ব্লাডপ্রেশার ইত্যাকার অসুখ কন্ট্রোলে রেখে নিরাপদ রাখতে হবে দৃষ্টির প্রখরতা। ইংরেজিতে আই-হেলথ (Eye Health) শব্দে একটা কথা আছে, অন্যান্য অঙ্গ বা অঙ্গসমূহের মতো চোখেরও রেগুলার চেকআপ দরকার। আর গ্লকোমা হলেতো কথাই নেই।
সবশেষে উপসংহারে আমরা বলবো, গ্লকোমা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে, অন্যকে জানাতে হবে, বুঝাতে হবে। যথা সময়ে রোগ-নির্ণয় ও আজীবন চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যানার, পোষ্টার, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ইত্যাদি মিডিয়ায় বাণী প্রচারের মাধ্যমে গ্লকোমা সচেতনতা বাড়াতে হবে, তবেই বাঁচবে দৃষ্টি, দেখতে পাবো সৃষ্টি।
লেখক : সিনিয়র শিশু সার্জন।