পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০২৩, ৭:৪৮:২৫ অপরাহ্ন

পলিথিনের বিরুদ্ধে যতোই আইন-আদালত করা হচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর ব্যবহার। প্রতিনিয়ত পলিথিনের প্রতি মানুষের নির্ভরতাই বাড়ছে। অথচ পলিথিন পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য সবকিছুর জন্যই মাারাত্মক ক্ষতিকর। এটি পঁচনশীল না হওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা না করেই যথেচ্ছভাবে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।ইতোপূর্বে পলিথিনের বিরুদ্ধে আইন হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনাও আছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে পলিথিন। বিভিন্ন সময় কাগজের ব্যাগ কিংবা পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। শহর গ্রাম সর্বত্র কাঁচামাল তরলসহ সব ধরণের পণ্য পরিবহনে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মোড়কে প্রতিদিনই পলিথিন এবং প্লাস্টিক মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণত পণ্য বহন বা প্যাকেটজাত করা ছাড়া পলিথিনের আর কোন ব্যবহার নেই; বিপরীতে রয়েছে অসংখ্য ক্ষতিকর প্রভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনই একমাত্র বস্তু, যার দ্বারা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে একটি দেশ। জানা গেছে, পলিথিন থেকে ‘বিষফেনোল’ নামক বিষ নির্গত হয়, যা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে তলদেশ ভরাট করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালেও বাষুদূষণ ঘটে। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে চর্মরোগ, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। পলিথিনে মাছ, মাংস মুড়িয়ে রাখলে কিছুক্ষণ পর এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার বিষাক্ত হয়ে ওঠে। পলিথিনে রঙ করার জন্য ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অনেক দেশে ক্যাডমিয়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্লাস্টিক দূষণের নতুন নতুন উৎস তৈরি হচ্ছে। জেলেদের ফেলে দেওয়া ও হারিয়ে যাওয়া নাইলনের জাল মাছের পেটে যাচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
দেশে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন করা হয়। এছাড়া, হাইকোর্টও ইতোপূর্বে ব্যবহারযোগ্য পলিথিন এবং প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে সেটি বেশিদিন কার্যকর হয়নি। এর কারণ হচ্ছে-অসচেতনতা, প্রশাসনের গাফিলতি আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। পণ্যের মোড়কে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তাই পলিথিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সব শ্রণির মানুষকে।