অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৩, ৩:০৬:১০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
আজ ১৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মার্কিন ৭ম নৌবহরকে মোকাবিলা করার জন্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ভারতীয় নৌবাহিনীর সমর্থনে সোভিয়েত রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান করে। এরপর মার্কিন রণতরী ৭ম নৌবহর যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলে। পাকিস্তানের মনে যুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার যেটুকু আশা ছিল সেটাও এর সঙ্গে শেষ হয়ে যায়।
এদিকে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় যেমন চলছিলো মুক্ত হবার বিজয়োল্লাস, তেমনি রণাঙ্গনে চলছিল বিজয়ের উচ্ছ্বাস। ইতোমধ্যে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলায় অবরুদ্ধ ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ক্রমাগতভাবে ভারতীয় মিগের একের পর এক বোমাবর্ষণ ও স্থলপথে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে দখলদার বাহিনীতে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। চারদিক থেকে পরাজিত হতে হতে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝে ফেলে যুদ্ধে তাদের পরাজয় শতভাগ নিশ্চিত। ফলে সকালে সব আশা ছেড়ে দিয়ে শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন নিয়াজী। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দিল দিল্লির মার্কিন দূতাবাসে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে। এরপর ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাসের কাছে জানতে চায়, নিয়াজীর এই প্রস্তাবে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সমর্থন আছে কিনা। প্রস্তাবের মূলকথা আমরা যুদ্ধ বন্ধ করেছি। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত গোটা পাকবাহিনীকে চলে যেতে দিতে হবে, কাউকে গ্রেফতার করা চলবে না। কিন্তু ভারত সরকার এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ভারতীয় বাহিনী পাকবাহিনীকে এই আশ্বাস দিতে রাজি হয় যে, যুদ্ধবন্দিরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার পাবেন। জেনারেল নিয়াজীর শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পেয়ে ভারতীয় বাহিনী মনে করে এটি তার কৌশল। নিয়াজীর প্রস্তাবকে তাদের কাছে মনে হলো এটি যুদ্ধবিরতি, আত্মসমর্পণ নয়। কিন্তু মিত্রবাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুতেই রাজি নয়। পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীর দেয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে বিকেলে জেনারেল মানেক শ’ পাকিস্তানীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দেয়া হবে না। এ সময় প্রস্তাবের প্রতি মিত্রবাহিনীর আন্তরিকতার নিদর্শন হিসেবে ১৫ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখা হবে বলে পাকিস্তানি জেনারেলকে জানিয়ে দেয়া হয়।