জগতে এমন কোন রাজশক্তি নেই, যা সমবেত জনগণের অপ্রতিহত বেগ রোধ করতে পারে। -দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস
ক্রেতা অধিকার দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৩, ৪:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন
ভোক্তা বা ক্রেতাদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্রেতা অধিকার দিবস। যখন এদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে, তখন আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যে চলছে রীতিমতো দুর্বৃত্তপনা। এখানে নেই কারও নিয়ন্ত্রণ। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতার অধিকার ভূ-লুণ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে বিনা কারণে মূল্যবৃদ্ধির খড়গ সইতে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় মুক্তবাজার অর্থনীতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি দোহাই দিয়ে ক্রেতা- ভোক্তাদের ওপর মূল্যবৃদ্ধির জগদ্দল পাথর চাপানো হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ী সি-িকেট চক্র। ক্ষুন্ন হচ্ছে ক্রেতা বা ভোক্তাদের অধিকার।
ক্রেতা-ভোক্তারা বরাবরই মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য যন্ত্রণার শিকার। এর মধ্যে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলা যায়, ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যে বাজার সয়লাব। ক্রেতাদের বাধ্য হয়েই অনেক সময় এগুলো কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে কৃষিপণ্যসহ যেকোন ধরণের পণ্যের উৎপাদন খরচ থেকে খুচরা বিক্রয়মূল্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনেক সময় পাইকারী বাজারের দামের চেয়ে খুচরা বাজারের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন হাত ঘুরে পণ্য আসে সাধারণ ক্রেতার হাতে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদনকারীরা। তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। খুচরা ক্রেতারাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাদেরকে পরিশোধ করতে হচ্ছে অধিকমূল্য। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের দেশে রয়েছে আইন। ‘ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ আইন’ নামে এই আইনটি পাস হয় ১৯৬৪ সালে। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সংসদে ‘ইস্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেটস রেজুলেশন নামে এটি পাস হয়। ১৯৮৫ সালে আইনটি সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি গ্যাজেট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে প্রণীত হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন। আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে এই আইনে। আইন অনুযায়ী বাজারের দেখভাল করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি থাকার কথা। বাংলাদেশ তথা এই উপমহাদেশে ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ৭০-এর দশকে। এর ৪৪ বছর আগে ভোক্তাবাদের উদ্ভব ঘটে আমেরিকায়। ১৯৩০ দশকে মহামন্দার সময় সমাজসচেতন লেখকরা এ নিয়ে শুরু করেন লেখালেখি। এরই সূত্র ধরে ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গঠিত হয় ভোক্তা ইউনিয়ন। তাদের পদাংক অনুসরণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকা এবং ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৬২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে ক্রেতা ভোক্তাদের চারটি অধিকার স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৩ সালে জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের সভায় ক্রেতা-ভোক্তা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি স্থান পায়।
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটির ব্যাপারে অবগত নয় সাধারণ মানুষ। আইনে এমনভাবে বিভিন্ন ধারা উপধারা রয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় বাজারের উপদেষ্টা কমিটি ইচ্ছে করলে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে ব্যবসায়ীদের মুনাফা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেধে দেয়ার সুযোগও রয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাঠ পর্যায় থেকে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয়, পচন বাবদ অপচয় ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে। এর ভিত্তিতেই ব্যবসায়ীর মুনাফা ধরে পণ্যের খুচরা দাম বেঁধে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী জেলা পর্যায়েও একটি কমিটি রয়েছে, যা এখন শুধুমাত্র কৃষিপণ্যের লাইসেন্স দেয়ার কাজটিই করছে। পাকিস্তান আমলে এই আইন দিয়েই বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সেটা সম্ভব এখনও। তবে প্রয়োজন উদ্যোগ। আইনের সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে যাতে একে পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আজ ক্রেতা অধিকার দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।