৫১ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি তারা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৩, ৫:৩২:৪৫ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে লালচান্দ চা বাগানের ১১টি শহিদ পরিবারের ১১ জন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ৫১ বছরেও শহিদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায় নি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতেও তাদের ভাগ্যে স্বীকৃতি মিলেনি। ক্যালে-ারের হিসেবে প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ ও বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর আসে। শহিদদের আত্মীয়-পরিজন, সহযোদ্ধারা শহিদ মিনারে ফুল দিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, বাকরুদ্ধ হয়ে যান। লালচান্দ চা বাগান হলো হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়।
একাত্তর সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে যখন মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিতে বাগানে গিয়ে বাগানের ১১ জন চা শ্রমিক জোয়ানকে ধরে নিয়ে যায় শায়েস্তাগঞ্জের দিকে এবং ব্রাশফায়ারে একসঙ্গে তাদের হত্যা করে। শহিদ ১১ জন শ্রমিক জোয়ান হলেন উক্ত বাগানের মৃত শ্রমিক জগদেব গোয়ালার যুবক ছেলে রাজকুমার গোয়ালা, মৃত বিহারী বাউড়ির ছেলে কৃষ্ণ বাউড়ি, মৃত হরিদাস সাধুর ছেলে লাল সাধু, মৃত বকেশ্বর বাউড়ির ছেলে দিপক বাউড়ি, মৃত নিতাই বাউড়ির ছেলে মহাদেব বাউড়ি, মৃত কৃষ্ণ বাউড়ির ছেলে সুশীল বাউড়ি, মৃত সন্যাশী বাউড়ির ছেলে লেপু বাউড়ি, মৃত বিহারী রায়ের ছেলে রাজেন্দ্র রায়, তার ভাই গৌরা রায়, কৃষ্ণ বাউড়ির ছেলে ভূবন বাউড়ি ও আতাব আলীর ছেলে অনু মিয়া।
ডিসেম্বর মাসে হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনে বীর বাঙালিরা। তখন লাল চান্দ চা বাগানের মুক্তিযোদ্ধারা শায়েস্তাগঞ্জের বধ্যভূমি থেকে শহীদদের কিছু হাড়গোড় এনে লালচান্দ বাগানে কবর দেয়। অত:পর দাবি ওঠে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এ জায়গাটি অযতœ আর অবহেলায় পড়ে রয়েছিল। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের পার্টি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণের দাবির মুখে জায়গাটিতে ছোট একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই স্মৃতিসৌধে প্রতি বছর বিজয় দিবসে, স্বাধীনতা দিবসে, মাতৃভাষা দিবসে সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, ফুল দেওয়া হয়, শপথ নেওয়া হয়। কিন্তু বড় পরিসরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, শহিদ পরিবারের ও শহিদদের স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ বা অগ্রগতি নেই। স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ১১ শহিদদের পরিবারের লোকজন বা তাদের পিতারা বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
কিছুদিন আগে লালচান্দ চা বাগানের একঝাঁক তরুণ ছোট্ট ও অপরিসর স্মৃতিসৌধটি বড় করে ও আকর্ষণীয় করে পুনঃনির্মাণ এবং তাদের পরিবারের শহিদ স্বীকৃতির জন্য বিভিন্নস্থানে আবেদন করেছেন। তারা শহিদদের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। এমনই এক তরুণ শ্রমিক সন্তান রণি ইয়াদব আবেগ তাড়িত হয়ে বলেন, আমাদের বাপ দাদারা শত নির্যাতন সহ্য করেও আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন। সকল চা শ্রমিক আজীবন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের পতাকার তলে থেকে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সরকার বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও চা শ্রমিক ১১ পরিবার স্বীকৃতি পায়নি। চা বাগানের চা শ্রমিকসহ দেশের সকল শ্রমিকের জন্য এটা খুবই বেদনাদায়ক, হতাশাজনক। শহিদ পরিবারের শহিদ স্বীকৃতি এবং তাদের শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্তির দাবি সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরই দাবি। এই দাবি বাস্তবায়িত হওয়া একান্ত দরকার।
লেখক : সাবেক শিক্ষক, কলামিস্ট।